দশমবারের মতো শেখ হাসিনাকে দলীয়প্রধান এবং টানা তিনবার ওবায়দুল কাদেরকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত করে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলন। সম্মেলনে নতুন কমিটি করার ক্ষেত্রে অন্যান্য পদগুলোতেও উল্লেখযোগ্য হেরফের করা হয়নি। পুরোনো নেতৃত্বই পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন আগামী তিন বছরের জন্য।
কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্বের আগমন না হয়ে পুরোনো নেতৃত্বের নবায়ন হয়েছে বলা চলে। সোজা কথায় বলা যায়, শেখ হাসিনার বিকল্প সভাপতি প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেই। আর তিনি যে আস্থাভাজন টিম নিয়ে কাজ করছেন, তারাও দলের জন্য অপরিহার্য। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা স্পষ্টতই বলেছেন যে, ‘শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার একমাত্র বিকল্প শেখ হাসিনা।’
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল দৃষ্টিগ্রাহ্য চমক সৃষ্টি না করলেও দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থায় ‘ব্যক্তি’, ‘পরিবার’, ‘গোষ্ঠী’ প্রাধান্যের ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ন রেখেছে। আওয়ামী লীগের (১৯৪৯) চেয়ে বয়সে প্রাচীন, জীবন্ত ও সক্রিয় রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৮৮৫), মুসলিম লীগ (১৯০৬), এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিতেও (১৯২৫) গবেষকেরা এ রকম প্রবণতা দেখতে পেয়েছেন, যা তীব্র সমালোচনার পরও উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবিভাজ্য অংশে পরিণত হয়েছে। তাবৎ বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় তা ‘অভিনব’ এবং ‘চমকবিশেষ’।
ফলে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ দলীয় নেতৃত্ব চয়নের ক্ষেত্রে চলমান ও গতানুগতিক যে ধারা, তার বাইরে যায়নি। অতএব সদ্য সমাপ্ত কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আসেনি। হয়তো দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেছেন যে নির্বাচনের ঠিক এক বছর আগে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলে তাদের পক্ষে আগামী নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর ও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সঠিকভাবে সামাল দেওয়া কিছুটা হলেও কঠিন হতে পারত। সম্ভবত এসব বিষয় বিবেচনা করেই কাউন্সিলে দলীয় নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আদৌ বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়নি এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর আস্থাভাজনেরাই দলের নেতৃত্বে আবার আসীন হয়েছেন।