মঙ্গলবার সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাইতেছে- ইটভাটার জন্য মাটি লুট, সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ন, বৈধ-অবৈধ আবাসন প্রকল্প, ব্যক্তিগত অবকাঠামো নির্মাণসহ বিবিধ কারণে সমগ্র দেশেই কৃষিজমি হ্রাস পাইতেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য উদ্ধৃত করিয়া এতে বলা হইয়াছে- দেশে কৃষিজমির পরিমাণ ১৯৮০ সালে মোট জমির প্রায় ৬৬ শতাংশ থাকিলেও ২০১৯ সালে উহার স্থিতি ৬০ শতাংশের নিল্ফেম্ন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলিতেছে, সমগ্র দেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২২০ হেক্টর আবাদি জমি বিনষ্ট হইবার বিদ্যমান ধারা অব্যাহত থাকিলে ২০৫০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আবাদি জমি বর্তমানের ১৪ শতাংশ হইতে ৬ শতাংশে নামিয়া আসিবে। ইহার ফলে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা যে সর্বোচ্চ হুমকির মুখে পড়িবে, উহা বুঝিবার জন্য বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। এমনকি বসবাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশও এমন পরিস্থিতিতে বজায় থাকিবার অবকাশ পাইবে না। সকল কিছু মিলাইয়া কৃষিজমি এইরূপ লাগামহীনভাবে অকৃষিকার্যে ব্যবহারের চিত্র অশনিসংকেত ব্যতীত আর কিছু হইতে পারে না।
আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারংবার নিষেধ করিতেছেন যে, কৃষিজমি ধ্বংস করিয়া অকৃষিকার্য চালানো যাইবে না। সোমবারও একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হইয়া তিনি অভিন্ন তাগিদ দিয়া বলিয়াছেন- শিল্পায়নের নিমিত্তে কৃষিজমি আর ব্যবহার করা যাইবে না। এতদ্সত্ত্বেও যখন অকৃষিকার্যে কৃষিজমির ব্যবহার অব্যাহত থাকিতেছে, তখন নিছক উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া ক্ষান্ত থাকা কঠিন। কৃষিজমি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা সরকারপ্রধান স্বয়ং বারংবার উচ্চারণ করা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ে উহা বাস্তবায়ন হইতেছে না কেন- খতাইয়া দেখা জররি।
আমরা মনে করি, কৃষিজমির অপরিকল্পিত ব্যবহার বন্ধ করিবার লক্ষ্যে প্রণীত ভূমি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি অন্তত সরকারি সংস্থাসমূহ মান্য করিলেও পরিস্থিতির এতটা অবনতি ঘটিত না। সমকালের প্রতিবেদনেই উঠিয়া আসিয়াছে কীভাবে মোংলা বন্দর সচল রাখিতে পশুর নদ খননের বালি পার্শ্ববর্তী তিন ফসলি ৭০০ একর জমিতে স্তূপীকরণ ঘটিয়াছে। ইহার ফলে ইতোমধ্যে ঐ অঞ্চলে চাষবাস মাঠে মারা গিয়াছে। অপরদিকে স্বীয় জেলা টাঙ্গাইলে ইটখলা কর্তৃক ফসলি জমির মাটি লুটের বিরুদ্ধে খোদ কৃষিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করিবার পরও স্থানীয় প্রশাসন উহা বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করিতেছে না। অধিকন্তু বিভিন্ন বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের কারণে রাজধানীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহই শুধু নহে; দেশের বর্ধিষুষ্ণ শহরগুলির সন্নিহিত জলাভূমি; চতুষ্পার্শ্বের কৃষিজমি কী হারে এবং কত দ্রুত লুপ্তপ্রায়, তাহার হিসাব যেমন কেহ খাতা-কলমে রাখিতেছে না; তেমনি এই সকল অপতৎপরতা বন্ধে সংশ্নিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলির কার্যকর তৎপরতাও পরিলক্ষিত নয়। আশা করা হইয়াছিল, কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন প্রণীত হইলে অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার বন্ধ হইবে। বহু বৎসর পূর্বে দায়িত্বটা ন্যস্ত হইয়াছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপর। কিন্তু কোন লগ্নে উহা প্রণীত হইবে, আর কার্যকরই হইবে কোন তিথিতে, তাহা কেহই নির্দিষ্ট করিয়া বলিতে পারিতেছে না।