প্রতিবছর ৫ থেকে ৫০ কোটি মানুষ বিশ্বের ১১১টি দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়া অঞ্চলে সর্বোচ্চ প্রকোপ লক্ষ করা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেশি পরিলক্ষিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী গত ৩০ বছরে বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে ৩০ গুণ। এডিস ইজিপ্টি বা অ্যালবোপিকটাস জাতীয় স্ত্রী মশার মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে মানবদেহে। মশাবাহিত হলেও এতে মৃত্যুর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। শহর বা শহরতলি এই ভাইরাসের বংশবিস্তারের নিরাপদ নিবাস। এ কারণেই ডেঙ্গু নগরজীবনের অন্যতম প্রধান সংক্রামক ব্যাধি।
২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ২০১৯ সালে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সীমা ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ঘটছে প্রায় প্রতিদিন এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ এখন বছর জুড়েই থাকতে পারে, শুরুতে যদিও এটা বর্ষাকালভিত্তিক ছিল।
> লক্ষণ:
ডেঙ্গু রোগের চারটি সেরোটাইপ রয়েছে (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪)। সাধারণত একবার এক সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হলে পরবর্তী সময় আরেকটি দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কারো হয়তো ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে, কিন্তু ঠিক কোন টাইপের ডেঙ্গু তা শনাক্ত করা হচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গু পরীক্ষার পাশাপাশি টাইপিং বের করাটাও জরুরি। কারণ প্রথমবার আক্রান্ত হলে সাধারণত কোনো বড় ধরনের উপসর্গ হয় না। দ্বিতীয়বার অন্য সেরোটাইপ দ্বারা আক্রান্ত হলে বড় ধরনের উপসর্গ হতে পারে। আক্রান্ত রোগীর ৫ শতাংশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের মারাত্বক উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এখন অন্যান্য উপসর্গের পাশাপাশি নাক, চোখ, মুখ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ হতে পারে। দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে জ্বরের মাত্রাও কম হতে পারে।
> তিন ধরনের ডেঙ্গু
ডেঙ্গু ক্লাসিক্যাল, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম—এই কয়েক ধরনের ডেঙ্গু হয়।
ক্লাসিক্যাল : ক্লাসিক্যাল বা সাধারণ ডেঙ্গুতে প্রচণ্ড জ্বর হয়, যা ১০৪ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্তও হতে পারে। জ্বর দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সঙ্গে মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংসপেশি বা গিঁটে ব্যথা, শরীরে র্যাশ থাকতে পারে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হলে তেমন সমস্যা নেই, এতে মৃত্যুর মতো ঘটনা সাধারণত ঘটে না।
হেমোরেজিক : ডেঙ্গু হেমোরেজিকে জ্বর কমে যাওয়ার দু-তিন দিনের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল র্যাশ বা রক্তবিন্দুর মতো দাগ দেখা যায়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে মাড়ি বা নাক দিয়ে আপনা-আপনি রক্তক্ষরণ, রক্তবমি, কালো রঙের পায়খানা, ফুসফুসে বা পেটে পানি জমা ইত্যাদি। রক্ত পরীক্ষা করালে দেখা যায়, রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেটের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে মৃত্যুঝুঁকি বেশি, যাতে শরীর থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডেঙ্গু শক সিনড্রোম : ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের উপসর্গগুলোর পাশাপাশি রোগীর রক্তচাপ হঠাৎ কমে যায়, নাড়ির গতি বৃদ্ধি পায়, হাত-পা শীতল হয়ে আসে, রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এমনকি রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের জ্বর হলে দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত বা অণুচক্রিকাও দিতে হতে পারে। তবে সবার যে এমন হবে, তা কিন্তু নয়।