আমাদের দেশে নিত্যপণ্যের বাজার এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রকৃত অর্থে এ গুরুত্বপূর্ণ খাতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ কখনই কার্যকর ছিল না। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি ব্যবসায়ীদের দুর্বিনীত হতে সাহস জুগিয়েছে। বর্তমান সরকারের বড় সাফল্য দৃশ্যমানভাবেই অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি করতে পেরেছে। বৈশ্বিকভাবে করোনা মহামারি না হলে এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও এই সূত্রে বৃহৎ শক্তির অনেকের পক্ষ থেকে নানা ধরনের অবরোধ না থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা আরও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের জন্য একে দুর্ভাগ্যই বলব। ঠিক এ সময়েই নির্বাচনি বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়েছে। বিএনপি নেতাদের সৌভাগ্য বৈশ্বিক সংকটের সূত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নানা কথা বলার সুযোগ তারা পেয়ে গেছেন। এ দেশে দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষ সাধারণত বিবেক, যুক্তি আর তথ্যসূত্র দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বিচার করেন না। একে রাজনীতিতে দেশপ্রেমহীনতার অভাব হিসাবেই মনে করা যেতে পারে। সাধারণ মানুষ অনেকেই রাজনৈতিক নেতাদের মেঠো বক্তৃতায় বিভ্রান্ত হন।
সরকারের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে অনেক সময় একদেশদর্শী বলে মনে হতে পারে। এসব দেখে সেই হঠাৎ ধনী পরিবারের কথা মনে হয়। অর্থবিত্তে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। কিন্তু কোনো সংস্কৃতিচর্চা তেমন নেই। এক পরিচিতজন গৃহকর্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন, তোমার এত সুসজ্জিত ড্রইংরুম রুম, কিন্তু একখানা বইয়ের আলমারি দেখলাম না। প্রত্যুত্তরে গৃহকর্ত্রী বললেন, একখানা বইও আছে-শোকেসের নিচের তাকে দেখতে পাবেন। আমাদের দশাও হয়েছে এমনই। আওয়ামী লীগ সরকার যতটা অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ঝুঁকেছে, শিক্ষা-সংস্কৃতির দিকে ততটা নজর দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। মানুষ খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ প্রভৃতির প্রত্যক্ষ ভোক্তা বলে এসবের সংকটে যতটা সরব, শিক্ষা-সংস্কৃতির ব্যাপারে ততটা নয়। সরকারপক্ষও তাই মানুষের প্রত্যক্ষ সংকটের প্রতিই নজর দিচ্ছে বেশি। কিন্তু জ্ঞানের পরিচর্যা ছাড়া যে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না, সে ব্যাপারে কোনো মনোযোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এতে একটি শঙ্কা থাকে। বাইরের চাকচিক্যে বোঝা যায় না কাঠামোটির ভেতরের দিক ঘুণে ফাঁপা করে ফেলেছে। হঠাৎ মুখ থুবড়ে পড়লে তখন হায় হায় করে লাভ হবে না। এ কারণে সভ্য দেশগুলো শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চা, গবেষণা ও প্রকাশনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি।