পাঁচ বছরেরও বেশি সময় আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। শুরুতে তারা সংখ্যায় ছিল নগণ্য। কিন্তু কিছু দিন পর থেকেই রাখাইন রাজ্যে (আরাকান) তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হতে থাকে।
নির্যাতন ও নৃশংসভাবে মৃত্যুর ভয়ে ভিটামাটি ছেড়ে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে বাঁচার আশায় বাংলাদেশ সীমান্তে জড়ো হয় তারা। একপর্যায়ে সব বাধা অতিক্রম করে নাফ নদী ও সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে আমাদের ভূমিতে আশ্রয় নিতে শুরু করে। তখন অনেকে তাদের ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনমিতিক সুবিধা মনে করে স্বাগত জানালেও পরে তাদের ভুল ভাঙতে থাকে।
দেখতে দেখতে বাংলাদেশে আগমনের পাঁচ বছর অতিক্রম করে ফেলেছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এখনো কোনো না কোনোভাবে সুযোগ পেলে সীমান্ত অতিক্রম করে আমাদের ভূখণ্ডে চলে আসছে তারা। তার ওপর যারা ক্যাম্পে বসতি গড়ে অবস্থান করছেন, তাদের পরিবার থেকে প্রতিবছর নতুন মুখ জন্ম নিয়ে দিন দিন বেড়ে চলেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর ২০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পগুলোতে। গত পাঁচ বছরে আড়াই লাখ নতুন রোহিঙ্গা শিশু যুক্ত হয়েছে আগের ঢুকে পড়া দশ লাখ শরণার্থীর সঙ্গে। এখনো দিনে-রাতে নদী ও সমুদ্রপথে চোরাচালানিদের সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এর ওপর রাখাইন রাজ্যে শুরু হয়েছে সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধ। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মি নামক বিদ্রোহীরা বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অনবরত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
এ যুদ্ধের প্রভাব এসে পড়ছে বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে। এ কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজ করছে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ।
ঘুমধুম উপজেলার সীমান্তবর্তী মানুষ ভীষণভাবে আতঙ্কগ্রস্ত। তাদের চোখে ঘুম নেই। তারা মর্টার শেলের শব্দে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। মৃত্যুভয়ে অনেকে কলেমা পড়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। দিনের বেলায় মর্টার শেল এসে আছড়ে পড়ছে কোনো কোনো জায়গায়। কক্সবাজারের সীমান্তে নতুন করে গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সেখানেও মানুষ ঘরের বাইরে যেতে চাচ্ছেন না। গরু চরাতে বা ধানক্ষেতে যেতে পারছেন না।