বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরার জায়গা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে এবং বিরোধী মতের প্রতি সহনশীল থেকে জনগণের কল্যাণে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই সর্বোচ্চ আইনকক্ষ। দেশের নাগরিকদের একটি গর্ব ও অহংকারের জায়গা। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন এবং মুক্তিকামী সমাজের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির প্রতীক। এই মহান সংসদকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানানোর সুযোগ কি আদৌ আছে? সেখানে ‘খেলা হবে’ বলে বক্তৃতা দেওয়া কি জাতির জন্য চরম হতাশার ও দুঃখের নয়? রাজনীতির মাঠের খেলা সংসদে মানায় না। প্রতিপক্ষকে শব্দবাণে জর্জরিত করা, জেলে ঢুকিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দেওয়া, আত্ম-অহমিকা কিংবা প্রতিহিংসা প্রদর্শনের জায়গা এটি নয়। এ ধরনের অদূরদর্শিতা সংসদের ভাবগাম্ভীর্য এবং জনমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভুলে গেলে চলবে না, জনগণের টাকায় সংসদ চলে—প্রতি মিনিটে যেখানে প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয় হয়। ফলে, এখানে প্রতিটি কথার পেছনে থাকবে জনগণের কল্যাণ ও মুক্তি।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অনেক পরিবারে দুবেলা চুলোয় ভাতের হাঁড়ি চড়ছে না। চাল-ডাল, তরিতরকারি কেনার সামর্থ্য হারাচ্ছে। খিদে পেটে অনেক শিশু ঘুমাতে যায়। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জরিপ বলছে, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যদিও দরিদ্রের হার নিয়ে সরকারের সাম্প্রতিক কোনো হিসাব নেই। অনেকে ভাবছেন সরকারের ‘উন্নয়ন-দর্শন’ উন্নয়ন-বিলাসিতায় রূপ নিয়েছে। সে উন্নয়ন-বিলাসিতার নিচে দরিদ্র মানুষ আরও অবহেলিত, নিষ্পেষিত হচ্ছে। উন্নয়নের ‘ট্রিকল ডাউন’ বা চুইয়ে পড়া তত্ত্ব তেমন কাজে আসছেন না। চুইয়ে পড়ার আগেই সে উন্নয়ন পথ হারিয়ে পাচারকারীদের হাতে বিদেশ চলে যাচ্ছে। সংসদে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলা প্রয়োজন।
সংবিধানের ১৫ ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রের অন্যতম একটি মৌলিক দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যসেবা বেহাল। চিকিৎসার ব্যয় নাগালের বাইরে। চিকিৎসাসেবার ৬৮ শতাংশ অর্থ জনগণকে নিজের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয়। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলা ও অনিয়ম প্রকট। মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। চিকিৎসাসেবা নিতে এসে ভোগান্তি, হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছে। চিকিৎসাসেবা পাওয়ার মতো একটি মৌলিক অধিকার অর্জনের সুযোগ একদিকে অপ্রতুল, অন্যদিকে অনিরাপদ। সাধারণ মানুষ প্রত্যাশিত ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অসহায় বোধ করছে। প্রতিবছর দেশ থেকে একটি বিশাল অঙ্কের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে চিকিৎসাসেবা নিতে ব্যয় হচ্ছে।