গত মাসে ঘি-ভোগ নামের ২৫ কেজির এক বস্তা চাল কিনেছিলাম ২ হাজার ১০০ টাকায়, রাজধানীর ক্যান্টেনমেন্ট এলাকার রজনীগন্ধা চালের মার্কেট থেকে। আর এ মাসে সিপাইবাগ থেকে ঘি-ভোগ কিনেছি ২ হাজার টাকায় ২৫ কেজির বস্তা। চালটি খেতে ভালো। কিছুটা সুগন্ধযুক্ত। কিন্তু দিনাজপুরের এই চাল আসলেই অরিজিনাল বা আদি নামের ধানজাত কি না তা জানি না। দিনাজপুরের বাসিন্দাদের জানার কথা।
মজুমদার নামের একটি কোম্পানির এই চালের প্রতি কেজির দাম পড়েছে যথাক্রমে ৮৪ ও ৮০ টাকা। ওয়েজ আর্নার হিসেবে এতো দাম দিয়ে চাল কেনা আমার পক্ষে কঠিন ছিল না। কিন্তু এখন আমি দেশে আছি এবং আমার আয় রোজগারের কোনো সংস্থান নেই। সামনের দিনগুলোতে ঘি-ভোগ কেনা সম্ভব হবে না এবং এতো দামি চালও খাওয়ার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
তখন আমি কোথায় নামবো, সেই ভবিষ্যৎ বলতে পারে না কেউ। কিন্তু ধেয়ে আসা অর্থনৈতিক মন্দার তথ্য আমরা পেয়েছি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। তিনি এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখতে মানা করেছেন। কারণ খাদ্য সংকট গোটা পৃথিবীকে যেভাবে তার গ্রাসে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাকে বাধা দিতে হলে শস্য উৎপাদন বাড়ানোর অন্য কোনো বিকল্প নেই।
খাদ্য মন্দার সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দার সখ্য কিন্তু নিবিড়। একটির সঙ্গে অন্যটির বলতে গেলে লাগামহীন বন্ধুত্ব। আপনার আয় রোজগার ভালো থাকলে কাটারিভোগ, কাটারি নাজির বা বিরুই বা অন্য জাতের নামি চাল কিনতে পারেন, কিন্তু আয় যদি মধ্যম সাইজের হয়, তাহলে তা নেমে আসবে বিরি ২৮-এ, বা সেই শ্রেণির চালই হবে তাদের জন্য আর রিকশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা মুদি দোকানি বা পান-সিগারেট বিক্রেতা, চায়ের দোকানি, অস্থায়ী বা ভাসমান লাখ লাখ গরিব মানুষের আয় তো যৎসামান্য, তারা মোটা চালের ক্রেতা।
তারা আটায় নিজেদের উদরপূর্তি করে। এরাই সংখ্যায় বেশি। বলা হয় ঢাকা মহানগর গত পঞ্চাশ বছরে যে পরিমাণ বেড়েছে, তার অধিকাংশই বেড়েছে অপরিকল্পিতভাবে, নগরশাসক ও সেবকদের চোখের সামনে, তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায়, ঠিক একই কায়দায় বেড়েছে দেশজ পণ্যের দামও। লাগামহীন সেই মূল্যবৃদ্ধির লাগাম কখনোই টেনে ধরা সম্ভব হয়নি।