‘One should hardly have to tell academicians that information is a valuable resource; knowledge is power. And yet it occupies a slum dwelling in the town of economics. Mostly ignored.’ ~ J. Stigler (1961)
এক
২০০৯ সালে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসা রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। প্রায় ১৩ বছর ক্ষমতায় থেকে দলটি নির্বাচনী সে অঙ্গীকার রক্ষায় নানা নীতিমালা ও কৌশল অবলম্বন করে আসছে। আমরা জানি, বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ধনী-গরিব নির্বিশেষে এখন সেলফোন, অল্প থেকে মধ্যম বয়সী কাজের মেয়েদের হাতে স্মার্ট ফোন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার, ইন্টারনেটে অংশগ্রহণ শম্বুক গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, করোনা প্যানডেমিকের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (এমনকি অফিস-আদালতের) কার্যক্রম ছিল ভার্চুয়াল, ওয়েবিনারে সেমিনার এবং অনলাইনে শপিং। এসবই ডিজিটাল বাংলাদেশের নমুনা বহন করে, যদিও এসব ক্ষেত্রে আশপাশের দেশ থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি বলে দুঃখবোধ আছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ অভিযাত্রার পর থেকে বলিষ্ঠ তথ্য-উপাত্তভিত্তিক একটা মূল্যায়নের প্রয়োজন ছিল। অবশ্য পত্রপত্রিকা কিংবা সরকারি-বেসরকারি গবেষণামূলক রচনা থেকে অগ্রগতি সম্পর্কে ছিটেফোঁটা কিছু ধারণা করা যায় যেমন যায় আশপাশে অথবা রাস্তাঘাটে, যানবাহনে চোখ খুললে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ একটা বই সেই প্রয়োজন মেটানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং আজকের নিবন্ধের নির্যাস ওই বই থেকে নেয়া।
দুই.
ড. মনজুর হোসেনের সাম্প্রতিক প্রকাশিত বই, Digital Transformation and Economic Development in Bangladesh Rethinking Digitalization Strategies for Leapfrogging (ডিজিটাল রূপান্তর এবং বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন উল্লম্ফনের জন্য কৌশলগত পুনঃচিন্তা)। সমকালীন মূল্যবান বইটি প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত প্রকাশক পালগ্রেভ, ম্যাকমিলান (২০২২)। লেখক মনজুর পরিচয়ে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এবং বর্তমানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক।
প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার বইয়ের শুরুতে বিধৃত আছে বইটি লেখার পেছনে লেখকের পরিকল্পনার কথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নিদর্শনস্বরূপ তার এ নিবেদন এবং তিনি দেশটির উন্নয়ন রূপরেখায় ডিজিটাল রূপান্তরকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছেন। তার কথায়, এ প্রথম কোনো একটি বই স্বল্পতম সময়ে যুব সম্প্রদায়ের শক্তির ওপর ভর করে উন্নত দেশের নিশানায় লাফিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে ডিজিটাল রূপান্তরকে বিবেচনা করেছে। জনমিতিক সুফল সামনে রেখে বাংলাদেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ এই, দ্রুততর প্রবৃদ্ধি পেতে দেশের যুবসমাজকে ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করার সময় এখনই: ‘In this context, the Bangladesh Government adopted a digitalization strategy in 2009 as a key development strategy by pledging to achieve middle-income status by 2021, which is fifty years of its independence. Digital Bangladesh has become a buzzword of development over time as the digitalization targets are aligned with development targets. Under the ‘Digital Bangladesh’ vision, the government undertook a massive digitalization process by investing in e-governance, ICT infrastructure, ICT parks, skills development programs, and so on. The Digital Bangladesh vision is an innovative policy framework of the Bangladesh government that may be considered a shifting development strategy in the context of the declining importance of traditional growth drivers, such as readymade garments, agriculture, etc...’। মোট ১৪টি অধ্যায়ে আকর্ষণীয় শিরোনামে লেখক বিষয়বস্তুভিত্তিক নিবন্ধগুলো সাজিয়েছেন তিনটি অংশে। প্রথম অংশে গুরুত্বপূর্ণভাবে থাকছে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামে উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির আদ্যপান্ত অর্জন এবং নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণমূলক নির্মাণকাঠামো। এ অধ্যায়গুলোয় আছে ডিজিটাল বাংলাদেশ দূরদৃষ্টি, আইসিটিতে আনুষঙ্গিক বিনিয়োগ এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক প্রেক্ষিতে ডিজিটালাইজেশনের চলমান অবস্থান। দ্বিতীয় অংশের অধ্যায়গুলো আইসিটি শিল্পের বর্তমান অবস্থার বিস্তৃত ব্যাখ্যা দিয়েছে, এর কৃতিত্ব এবং চ্যালেঞ্জগুলো যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সেবা খাতের রফতানিতে এ উপখাতের অবদান, আইসিটি রকমারি দ্রব্য এবং সেবা এবং আইসিটি শিল্পের প্রকৃতি। তাছাড়া একীভূত অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন জেলায় আইসিটি পার্কের ভাবনা এবং তার সঙ্গে এ খাতে দক্ষতা ও মানব পুঁজির ঘাটতির কথা থাকছে বিস্তৃত পর্যালোচনায়।