দেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে নানা পন্থায়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানতে পেরেছে, বর্তমানে বিদেশে অর্থ পাচারে বড় ভূমিকা রাখছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল বাংকিং। হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে এ অর্থ। ব্যক্তিগত পর্যায়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো টাকার অঙ্ক খুব বেশি না হলেও মোট হিসাবে তা অনেক বড়। বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে এই চ্যানেলে। জানা যায়, একে ঘিরে গড়ে উঠেছে অনেক সিন্ডিকেট। আর তা নিয়ন্ত্রণ করছে দেশের বাইরে থাকা অবৈধ কারবারিরা। তারা বিদেশ থেকে রেমিট্যান্সের ডলার সংগ্রহ করে তা অন্যত্র ব্যবহার করছে। আর দেশে তাদের চক্রের সদস্যরা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় মুদ্রা টাকা। এর ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে গেছে। এতে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে। আবার সীমান্ত এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দেশের ভেতর থেকেও অর্থ পাচার করা হচ্ছে। এসব কারণে ডলার সংকট আরও তীব্র হয়েছে এবং কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। পুরো বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত অবিলম্বে এদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া। এ অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
সন্দেহ নেই, মোবাইল ব্যাংকিং সাধারণ মানুষের ছোট ছোট অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধের কাজটি অনেক সহজ করে দিয়েছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহার কাম্য নয় কোনোভাবেই। এ কারবার থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের নির্বৃত্ত করতে হবে। অনুসন্ধানে অন্তত ৫ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের হুন্ডি সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে সিআইডি। তবে শুধু মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের নির্বৃত্ত করলেই চলবে না, যে প্রক্রিয়ায় এ কারবার চলছে তাও বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। জানা যায়, এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপ। সিআইডি এরকম চারটি বিশেষ অ্যাপের কথা জানতে পেরেছে, যেগুলো পরিচালনা করা হয় দেশের বাইরে থেকে। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এগুলো ব্যবহার করে এমন পদ্ধতি গড়ে তুলেছে, যার মাধ্যমে এক মিনিটে ৫০ জনের কাছে টাকা পাঠানো যায়। আমরা মনে করি, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে এসব অ্যাপ নিষ্ক্রিয় করে ফেলা দরকার। সেই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কর্মকাণ্ডকে সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় আনতে হবে।