কবীর সুমন তখন সুমন চট্টোপাধ্যায়। তখন মানে নব্বই দশকের শুরুতে। ১৯৯২ সালে যখন বাংলা গানে বাঁকবদলের সেই গানের অ্যালবামটি বেরুলো ‘তোমাকে চাই’ শিরোনামে, তখন সুনামির মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেল বাংলা গানের শ্রোতাদেরকে। মানবিক সৌন্দর্য আর নান্দনিক সৌকর্য তার গানকে আগের সকল ধারার গান থেকে আলাদা করে তুলেছে এবং নতুন রাজপথ তৈরিতে সহযোগিতা করেছে। এই গানের সুরে নেই নজরুলী সুরের জৌলুস, নেই রাবীন্দ্রিক কথার কাব্যিক কুহক, কিন্তু সুমনের ছিল রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গীকারের শিল্পিত স্বভাব।
প্রেমকে তিনি দীক্ষিত করেছিলেন আগুনের প্রবণতায়, আর মানবীয় মূল্যবোধগুলোকে তিনি পুনর্বিন্যাসের জন্য এমন সব গান বাঁধতে শুরু করলেন যার নজির আগে আমরা কখনো দেখতে পাইনি। কিশোর কুমার বা মোহাম্মদ রফির মতো স্বর্ণকণ্ঠ নন তিনি, কিন্তু ওই কণ্ঠ আমাদেরকে ইস্পাতপ্রত্যয়ে সবচেয়ে বেশি উজ্জীবিত করে। তার গান শুনে অজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ, উভয় গোষ্ঠীই মুগ্ধ। তার গানের পথ ধরেই হাঁটতে গিয়ে একদিন হঠাৎ করেই দেখতে পেলাম দেশ পত্রিকায় ‘কহেন কবি কোহেন’শিরোনামে লিওনার্দো কোহেনকে নিয়ে সুমনের লেখা এক সুখপাঠ্য প্রবন্ধ। এরই কিছুদিন পরেই বোধহয় হাতে এলো তার লেখা প্রবন্ধের একটি বই, খুব সম্ভবত ‘দূরের জানালা’ নামে, সেখানে আমার প্রিয় বেশ কয়েকজন লেখক সম্পর্কে তো বটেই, সম্ভবত মার্কেসকে নিয়েও ছিল একটি নিবন্ধ। একজন গীতিকার লিখছেন এসব প্রবন্ধ? অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। গান শুনে তো বটেই, এসব লেখা দেখে বুঝতে বাকি ছিল না, তার উত্থান আকস্মিক হলেও, তার প্রস্তুতি ছিল দীর্ঘ এবং অবশ্যই শিল্পরুচি ও অঙ্গীকারে দীক্ষিত।
এই সুমন গান গাইবেন ঢাকায় বহুদিন পর। কিন্তু কোথায়? প্রথমে জায়গা নির্ধারিত ছিল জাতীয় জাদুঘর। আমাদের দক্ষ পুলিশ বাহিনী নাকি জাদুঘর ও নাগরিক শ্রোতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে অন্যত্র করার পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের পুলিশ বাহিনী আজকাল তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের অতিরিক্ত আরও বহু দায়িত্ব পালন করে, যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো আদৌ হবে কি হবে না, হলেও কয়টার মধ্যে শেষ করতে হবে, এসব তারাই নির্ধারণ করে দেয়। তারা নির্ধারিত জায়গা বাতিল করে দেওয়ার হুকুম দিতে পারেন। এর আগে আমরা দেখেছি পহেলা বৈশাখ তাদের আবদারে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই শেষ করে দেয়ার কথা। কিন্তু কোনো ওয়াজ মাহফিল নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করার কোন হুকুম তারা জারি করেননি কখনো। কোত্থেকে আসে এসব হুকুম? আমি জানি, এ কেবল পুলিশ বিভাগের মর্জির ব্যাপার না, তাদের উর্ধ্বতন অদৃশ্য কেউ আছেন যিনি তাদেরকে কলকাঠির মতো নাড়েন।