স্বেচ্ছাচারে গড়ে ওঠা ঢাকা

দেশ রূপান্তর হরিপদ দত্ত প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২২, ১১:১৭

বঙ্গ-ভারতের ঔপনিবেশিক পরাধীনতার কলঙ্ক শুধু পলাশী নয়; মুর্শিদাবাদ তো বটেই, কলকাতাও। বঙ্গবিজয়ী ষড়যন্ত্রকারী ইংরেজ জয় করেও কেন মুর্শিদাবাদকে রাজধানী না-করে কলকাতাকে করল? এ কারণেই করল, তাদের প্রকল্প ছিল অর্থনীতি বা বাণিজ্য। সমুদ্র হচ্ছে নৌপথ, বাণিজ্যপথ, পণ্যবাহী পথ, নৌবাহিনীর পথ। শুধু ইংরেজ আর ইউরোপীয় বণিকশ্রেণি নয়, দেশীয় জগৎ শেঠেরাও জানত তাদের জন্মভূমি রাজস্থানের মরুপথের পরিবহন যান উটের চেয়ে উত্তম বাণিজ্যপথ সমুদ্র। এ পথেই চলে ধনের দেবী শ্রী শ্রী লক্ষ্মী এবং যুদ্ধের দেবী শ্রী শ্রী চণ্ডী এবং দুর্গা। জানল না শুধু বাউল-বৈষ্ণব ভাববাদী গায়ক-কীর্তনীয়া বাঙালিরা। কম দুঃখে কি রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করো নি।’ সেই ষোলোআনা বাঙালি হওয়ার জন্য কত না রক্ত দিল জাতি। আক্ষেপটা তো এখানেই। শুধু বাঙালি হলেই দিন চলে না, মানুষও হতে হয় যে। বাঙালিত্বের গৌরবের চেয়ে অনেক বড় মনুষ্যত্ব আর মানুষের গৌরব।


সমুদ্রপথে ইংরেজের সঙ্গী শুধু উপনিবেশবাদ আর সাম্রাজ্যবাদই হয়নি, নিজেদের প্রয়োজনে সঙ্গে এনেছে উন্নত প্রযুক্তিগত সভ্যতা, বিজ্ঞানচর্চা, আধুনিক শিক্ষা-সাহিত্য। ইউরোপীয় রেনেসাঁকে বাঙালি চিনল, জানল। অবশ্য নিজেদের মতো করে। আইন-ব্যবসা শিখতে বাঙালি এই প্রথম সমুদ্রযাত্রী হলো। মাইকেল থেকে রবীন্দ্রনাথ গেলেন আরও বড় কবি হতে। রেনেসাঁর কারিগরদের তো বিলাত গমন এবং বসবাসের ফলে প্রবল শীতে গাত্রবর্ণ কালো থেকে খানিকটা গৌরবর্ণ ধারণ করল। অন্যদিকে নগর কলকাতা সমুদ্রতীরবর্তী হওয়ায় ব্রিটিশ পুঁজি গঙ্গা নদীর তীরবর্তী স্থানে শিল্প-কারখানা তৈরিতে এগিয়ে আসে। পণ্য পরিবহনে নৌপথ বাণিজ্যের প্রধান পথ হয়ে ওঠে। শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে ওঠে কলকাতা। প্রযুক্তি শিক্ষা কেন্দ্র থেকে আধুনিক চিকিৎসা কেন্দ্রও গড়ে ওঠে শহরে। দর্শনচর্চার নিদর্শন তো তরুণ অধ্যাপক ডিরোজিও। ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলন, পৌত্তলিকতাবিরোধী নিরাকার একেশ্বরবাদ বা ব্রাহ্মধর্ম জীবন্ত এক ইতিহাস। কলকাতা হয়ে ওঠে বাঙালির আধুনিক মনীষা চর্চার প্রাণকেন্দ্র। বাংলা ভাষায় প্রথম কোরআনের অনুবাদক ভাই গিরীশচন্দ্র সেনের জন্মস্থান ঢাকার নরসিংদীতে হলেও অনুবাদ কার্যটির জন্য আরবি-ফারর্সি শিক্ষা নিতে তাকে যেতে হয় কলকাতায়। ঢাকা তো ছিল তার বাড়ির পাশের শহর। যশোরের মধুসূদন দত্তের বেলায়ও তাই খাটে। শুধু বিদ্যাচর্চা নয়, আধুনিক বিনোদনের যে চলচ্চিত্র তা নির্মাণ শিক্ষার জন্য যাত্রা-থিয়েটারের মঞ্চ ছেড়ে বাঙালিকে প্রথম যেতে হয় কলকাতায়, তারপর বিলাতে।


আজকের টিউশন বা প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে এত যে হইচই, তার পেছনের ইতিহাসটা চমকপ্রদ। শিক্ষা পেশা বা শিক্ষা-বাণিজ্য ছিল প্রাচীন যুগেও। বৈদিক সাহিত্য, মহাকাব্য, পুরাণ, স্মৃতিশাস্ত্রের নিদর্শন আছে। বৈদিক পণ্ডিত-মুনি-ঋষিরা শাস্ত্র শিক্ষা দিতেন দক্ষিণার বিনিময়ে। রাজা-বাদশাহর সন্তানরা শিক্ষা পেত দেশি-বিদেশি পণ্ডিত ওস্তাদদের হাতে মণি-মুক্তা তুলে দিয়ে। মুঘল যুগে শিক্ষার বাহন ছিল আরবি-ফারসি। প্রশাসনিক ভাষাও তাই। ঔপনিবেশিক যুগে প্রশাসনিক ভাষা ইংরেজি প্রবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত ফারসি ছিল সরকারি ভাষা। লক্ষেèৗ, বেনারসের ওস্তাদরা দল বেঁধে কলকাতায় চলে আসতেন। তারা বনেদি হিন্দু এবং উচ্চবর্গীয় নাগরিকদের ঘরে ঘরে আরবি এবং ফারসি শিক্ষা দিতেন। তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত শুধু ভাই গিরীশচন্দ্র সেনই নন, রাজা রামমোহন রায়ও। আরবি-ফারসিতে রামমোহনের পাণ্ডিত্য অসাধারণ। তিনি ফারসি ভাষায় পত্রিকাও প্রকাশ করেন। তার পত্রিকার নাম ছিল ‘মিরাত-উল-মুল্ক’।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us