শিশুর মরদেহ ছিল হাসপাতালে, বাইরে স্বজনদের আর্তনাদ। এই আর্তনাদ দেখে যেকোনো পাষাণেরও মন নরম হবে। কিন্তু রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের মনুষত্বহীন ও চরম নিষ্ঠুর কিছু মানুষ টাকা ছাড়া শিশুর মরদেহ ছাড়েনি। কয়েক বছর আগে আমার নিকটাত্মীয়ের এক শিশু বাড়িতে মারা যায়। কিন্তু মা-বাবার মন মানে না। যদি বাঁচানো যায়, সেই চেষ্টাতে রমেক হাসপাতালে তাকে আনা হয়েছিল। অবশেষে হিমঘর থেকে টাকা দিয়ে শিশুর মরদেহ ছাড় করতে হয়েছে। এমনকি দালাল চক্রের গাড়িতে বেশি টাকা দিয়ে মরদেহ বাড়িতে নেওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না। সেদিন মনে হয়েছিল, এই হাসপাতালের মানুষগুলো কত নির্মম।
রংপুর মেডিকেল কলেজের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ বি এম রাশেদুল আমীর। ১৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য রাতে তাঁর মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। রোগী ভর্তি ফি ২৫ টাকা। ভর্তিকেন্দ্রে দাবি করা হয় ২৫০ টাকা। চিকিৎসকের মা পরিচয় জানার পরও ৫০ টাকা ফি গ্রহণ করে। আইসিইউতে রাশেদুল আমীরের ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে জোর করে ২০০ টাকা নেন কর্মরত দুই ব্যক্তি। ব্যক্তিগত সহকারী চিকিৎসকের পরিচয় দিলেও চাঁদা নেওয়া বন্ধ করেননি; বরং ওই ব্যক্তি বলেছেন, ‘যে স্যারের মা হোক, টাকা দিতে হবে।’ ভুক্তভোগী চিকিৎসক যখন হৃদ্রোগে আক্রান্ত মায়ের শয্যার পাশে ছিলেন, তখন তাঁর কাছেও টাকা দাবি করা হয়। ছোট্ট একটি ভিডিওতে দেখলাম, ভুক্তভোগী চিকিৎসকের কাছে টাকা দাবি করছেন দুই ব্যক্তি আরেকজন চিকিৎসকের সামনে। ভুক্তভোগী চিকিৎসক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।
রমেক হাসপাতালের অবস্থার কত অবনতি হলে ওই হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসককে মায়ের চিকিৎসার জন্য নিজের কর্মস্থলে বাড়তি টাকা দিতে হয়। কতটা নিরুপায় হলে তিনি লিখিত অভিযোগ করেন। কর্তৃপক্ষের প্রতি কতটা অনাস্থা থাকলে অনুলিপি সংসদ সদস্য, মেয়র, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে দেন। কর্তৃপক্ষ কতটা ভোঁতা হলে শত শত অভিযোগ আমলে না নিয়ে দুর্বৃত্তদের লালন-পালন করে চলেছে। বাংলাদেশে কোনো কোনো সরকারি বিভাগ সম্পর্কে এমন কথা চালু আছে, নিচের পদে ঘুষ নিলেও তার ভাগ ওপরের পদের ব্যক্তিরাও পান। এখানেও সেই ভাগ-বাঁটোয়ারা আছে কি না, কে জানে! বাংলাদেশ কি তবে অনিয়ম-দুর্নীতির নিরাপদ স্থান? এমন হলেও বিস্মিত হওয়ার কিছুই থাকবে না।