সব সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে চলে এল। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ চীন। এ বিবৃতি যে মঞ্চ থেকে এসেছে, সেটি নানা কারণেই বড় বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে। কেননা, সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলন থেকেই এ বিবৃতি এসেছে।
প্রশ্ন হলো, চীনের এই উদ্বেগ পুতিন স্বীকার করে নিলেন, এর তাৎপর্যটা আসলে কী? গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেনে বড় ধরনের সামরিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনে নিজেদের দখলে নেওয়া আট হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা খুইয়েছে তাঁর সেনাবাহিনী। এর অর্থ হচ্ছে, ঘনিষ্ঠতম মিত্রদের ওপর রাশিয়ার প্রভাব কমেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া থেকে ছাড়কৃত দামে তেল ও গ্যাস কিনছে চীন। কিন্তু ইউরোপের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চীনের প্রধান পথটি বন্ধ হয়ে গেছে। চীন স্থলপথে কাজাখস্তান ও রাশিয়া হয়ে ইউরোপে পণ্য পাঠায়। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং বৈশ্বিক মন্দার মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির দেশ চীনের জন্য অবশ্যই উদ্বিগ্ন হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে।
বেইজিং পশ্চিমাদের চাপ অগ্রাহ্য করে মস্কো থেকে জ্বালানি আমদানি করছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এটা প্রশংসনীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন চায়, বৈশ্বিক অর্থনীতি যেন সব সময় স্থিতিশীল থাকে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে পাল্টে দিয়েছে। এর প্রভাব গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী।
মস্কোর দিক থেকে চীনের এ উদ্বেগকে স্বীকার করে নেওয়ার কারণ হলো, চীনের প্রতি পুতিনের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা এবং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ক্রেমলিনের অস্বস্তি। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া এখন মরিয়া হয়ে প্রযুক্তির সন্ধান করছে। এ ক্ষেত্রে হাতে গোনা যে কয়েকটি দেশ রাশিয়াকে সহায়তা করতে পারে তার মধ্যে চীন অন্যতম। রাশিয়ার ওপর দ্বিতীয় ধাপের আরোপ করা জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা যুক্তিসংগত কারণে বেশি কার্যকর হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীন হাতে গোনা কয়েকটি দেশের একটি, যারা দীর্ঘ মেয়াদে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনতে পারে।