বাংলাদেশের বাজেটের নথিপত্র আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে প্রস্তুত হয় না। এ ছাড়া, সরকারের নিরীক্ষা প্রতিবেদন বা অডিট রিপোর্টও যথেষ্ট মানসম্মত নয় এবং তা দ্রুততম সময়ে জনগণের কাছে পৌঁছায় না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি বিশ্বের ১৪১টি দেশের ফিসক্যাল ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট ২০২২-এর প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে যেসব দেশ বৈশ্বিক মানদণ্ড মেনে বাজেট প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে রয়েছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশ সপ্তম স্থানে রয়েছে। সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আফগানিস্তান। ৮ সেপ্টেম্বর ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এ ব্যাপারে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সাবেক সচিব ও সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, ‘অডিট রিপোর্ট প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে মার্কিন প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে, আমি তার সঙ্গে একমত। এখানে একটি রিপোর্ট প্রকাশে প্রায় আট বছর লেগে যায়। সবার মধ্যেই গাছাড়া ভাব। রিপোর্টটি যখন প্রকাশ করা হয় তখন এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অনেকেই আগের অবস্থায় থাকে না। কেউ কেউ হয়তো মারাও যায়। এখানে জবাবদিহি নেই। যারা এর জন্য দায়ী তাদের ধরা হয় না, শাস্তি হয় না। এ কারণেই অডিট রিপোর্ট প্রকাশে এত বিলম্ব। সময়ক্ষেপণ করার কারণে রিপোর্ট প্রকাশ করার পর এর কোনো তাৎপর্যও থাকে না। এ সংস্কৃতির অবসান হওয়া উচিত।’
মার্কিন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বাজেট-সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশে বেশ অগ্রগতি হচ্ছে। বাজেট প্রস্তাবগুলোও যথাসময়ে জনগণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ঋণের তথ্যও সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রাকৃতিক সম্পদের রাজস্বসহ সরকারের আয়-ব্যয়ের একটি পরিপূর্ণ তথ্য সহজেই পাওয়া যায়। কোথা থেকে আয় হবে, কোন কোন খাতে খরচ করা হবে–জনগণ চাইলেই পেতে পারে। বাজেটের সব তথ্যই মোটাদাগে বিশ্বাসযোগ্য। তবে, সরকারের অডিট বিভাগের প্রকাশিত হিসাবসংক্রান্ত রিপোর্টে তথ্যের ঘাটতি থাকা ও রিপোর্টগুলো গ্রহণযোগ্য সময়ে প্রকাশিত না হওয়াসহ অডিট বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও মার্কিন প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তা ছাড়া, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের কার্যাদেশসংক্রান্ত তথ্য সরকার প্রকাশ করে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।