মাসিদের যে দরদ থাকতে নেই, তা নয়। দরদ তাঁদের থাকে; তাঁরা এমনকি কান্নাকাটিও করেন। তবে মায়ের মতো না; মায়ের কান্নাকাটিই খাঁটি বস্তু। মা কিন্তু অনেক সময় কাঁদতেও পারেন না। শোক অল্প হলে কাতর থাকেন, বেশি হলে পাথর হয়ে যান। ওই জ্ঞান থেকেই মাসিরা কান্নাকাটি করলে মায়েদের মনে সন্দেহ দেখা দেয়, মাসিরা হয়তো ভান করছেন। মতলব আছে লোক ঠকানোর। ব্যাপারটা সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি সবখানেই ঘটে। রাষ্ট্রের যাঁরা কর্তা, যাঁদেরকে আমরা সরকার বলে চিনি; সমালোচনা শুনলেই তাঁরা চটে লাল হন। ভাবেন, তাঁরা রাষ্ট্রকে কত কষ্টে যত্ন-আত্তি করছেন; মায়া করছেন। রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ তাঁদের মতো আর কে বোঝে? সেখানে অতিরিক্ত উৎপাত কেন? মাসিদের কেন আনাগোনা? মাসিদের ব্যাপারে মায়েদের এই ব্যবহার পুরোনো ব্যাপার। হালে দেখা যাচ্ছে শিল্পপতিরাও ওই রকমই করছেন।
বাংলাদেশে শিল্প মালিক, মিডিয়ার মালিক ও রাষ্ট্রের মালিক সবাই এক ও অভিন্ন পক্ষ; তাঁরা মালিকপক্ষ। পরস্পর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়; একে অন্যের মাসতুতো ভাই-ই, যথার্থরূপে। মালিকরা দাবি করে থাকেন- যে শিল্পকে তাঁরা সন্তানের মতো লালনপালন করেন; সেখানে বাগড়া দেন শ্রমিকরা। আবার তাঁর সঙ্গে এসে জোটেন তথাকথিত নাগরিক সমাজের মাসিরা। এই মাসিদের নিশ্চয়ই মতলব আছে, হয়তো শিল্পের ধ্বংসই তাঁরা চান। বিদেশিদের এজেন্ট হওয়া বিচিত্র নয়। হ্যাঁ, এটা তো ঠিকই যে সাধারণ নাগরিক ও শ্রমিকরাও শিল্পের আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে অজ্ঞ। কিন্তু এটা তো সবাই জানে, বাংলাদেশে শিল্প খাতের সবচেয়ে বড় 'পুঁজি' সস্তা শ্রম। এত সস্তায় এমন শ্রম দুনিয়ার অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। আর এই শ্রমিকদের অধিকাংশই শ্রম বিক্রি করেন বেঁচে থাকার অন্য কোনো উপায় নেই বলেই। এই নারীরা যে শুধু দেশের কারখানাতেই যান, তা নয়। সৌদি আরবে পর্যন্ত চলে যান, এমনই তাঁরা দুঃসাহসী ও কর্মঠ। সৌদি আরবে তাঁরা পবিত্র হজের জন্য যান না; জীবিকার খোঁজে। সেখানে গিয়ে কী ধরনের নির্যাতনের শিকার হন, তার বিবরণ তাঁরা দিতে পারেন না; ভাষার অভাব এবং স্বাভাবিক লজ্জায়। সৌদি মালিকরা তো বটেই, বাংলাদেশের দূতাবাসের লোকরাও এই মেয়েদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে কার্পণ্য করেন না।