জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য কর্মঘণ্টা কমিয়ে অফিস সময়সূচিতে বড় পরিবর্তন এনেছে সরকার। পাশাপাশি স্কুলের সাপ্তাহিক ছুটিও দুদিন করা হয়েছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা ও সংকট নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
আলী ইমাম মজুমদার : যেহেতু এক ঘণ্টা অফিসের সময়সূচি কমানো হয়েছে, তারপর স্কুলও একদিন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে জ্বালানি সাশ্রয় কিছুটা হবে, অবশ্যই হবে। এখানে ব্যাপারটা হচ্ছে, মূলত উদ্দেশ্যটা মহৎ। এটাকে আমি ওয়েলকাম করছি। একঘণ্টা অফিস কমিয়ে দিয়েছে, সেটা ঠিক আছে। তবে এটা টেম্পোরারি হওয়া উচিত। এটা কিছুদিন পরে রিভিউ করা উচিত। কারণ, সবসময় তো এরকম থাকবে না।
আমাদের এখানে আমরা সারা দেশে একাধিকবার বিভিন্ন সময়সূচি নিয়ে অফিস করেছি... আমরা যখন চাকরিতে ঢুকি, তখন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রবিবার, শনিবার ছিল হাফ ছুটি। সেখানে আমাদের অফিস টাইম ছিল ১০টা-৫টা, আর শনিবারে ছিল ২টা পর্যন্ত। আমাদের তো প্রথমে মফস্বল থেকে চাকরির শুরু, মাঠপর্যায়ের লোক আমরা। তখনো কিন্তু সচিবালয় ছিল আড়াইটা পর্যন্ত। এখন সরকার অফিস টাইম ৮টা-৩টা করেছে, সেটা যদি ৯টা থেকে করা হতো স্কুলটাইম আর অফিস টাইম একই সময়ে হতো না। একইভাবে এই সময়সূচি মফস্বলের জন্যও যথাযথ নয় বলে মনে করি। ধরুন, আপনার দেশের বাড়িতে জেলা সদরের বিভিন্ন কাজে, মানে মামলা ছাড়াও নানান কাজে গ্রাম থেকে লোকে জেলা শহরে আসে। সেখানে এমন ব্যবস্থা তো অনেক প্রত্যন্ত স্থানেও নেই যে গ্রাম থেকে সকাল ৮টার মধ্যে জেলা শহরে চলে আসব। দেখা যায় দূরের কোনো গ্রাম থেকে এক/দুই মাইল হেঁটে এসে অটো বা কোনো বাহনে করে বাসস্টপে আসবে, বাস ধরে উপজেলায় যাবে, সেখান থেকে আবার জেলা শহরে যাবে। সুতরাং, অফিস টাইম যেটা এতদিন ৯টা-৫টা ছিল সেটা এক ঘণ্টা কমিয়ে দিয়েও, মানে ৯টা-৪টা কিংবা ১০টা-৫টা করা যেত। কিন্তু মফস্বলের জন্যও অফিস টাইম এগিয়ে আনা ঠিক হয়নি। আর ঢাকার ক্ষেত্রে অফিস টাইম আর স্কুল টাইম একই সময়ে হয়ে যাওয়াটা সমস্যা। এটা ঠিক হয়নি। এখানে ৮টায় স্কুল শুরু হয়, অফিসও শুরু হয়। এখানে অফিস সহজেই ৯টা থেকে শুরু করা যেত।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আমার ভিন্নমত আছে। এটা আবশ্যক ছিল না, এর জন্য কোনো দাবি ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পেছনে, মানে ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের একটা অংশ গাড়িতে চলাফেরা করে। এছাড়া, আমাদের দেশের ব্যাপক পরিমাণ, লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যায়, তারা পায়ে হেঁটেই স্কুলে যায়। এখানে সারা দেশের লার্জ নাম্বার অব স্টুডেন্টদের কথা বলছি। যেখানে স্কুলগুলোতে লেখাপড়া ঠিকমতো হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে এবং শিক্ষকরাও মনোযোগী না, সময় মতো যান না বলে অভিযোগ আছে। আমাদের বেশিরভাগ স্কুলই তো দূর-দূরান্তে, গ্রাম বা মফস্বলের প্রাইমারি স্কুলের কথা বলছি। তো সেখানে আমরা চট করে দুদিন স্কুল ছুটি দিয়ে দিলাম। বলা হচ্ছে, ছাত্র-ছাত্রীরা পাঠে অধিকতর মনোযোগী হবে, এটা কীভাবে হবে আমি ঠিক বুঝিনি। মূলত যেটা বলতে চাই, এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে টাইমটা ঠিক করা হয়েছে, অফিস টাইমের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। দেখা যাচ্ছে, সকাল ৭টা থেকে ট্রাফিক জ্যাম লেগে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুরুর সময়টা অফিসসূচির সঙ্গে অন্তত একঘণ্টা গ্যাপ রাখা উচিত ছিল।