রাশিয়া থেকে কম দামে তেল আমদানির উপায় বের করতে কয়েক দিন ধরে সরকারের বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করে হলেও রাশিয়া থেকে তেল আমদানির চিন্তাভাবনা করছিল সরকার।
তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ডলারের বিপরীতে বিকল্প মুদ্রায় রাশিয়া থেকে তেল আমদানি সম্ভব নয়। কারণ, বিশাল অঙ্কের রাশিয়ান মুদ্রা রুবল বাংলাদেশের পক্ষে জোগান দেওয়া অসম্ভব। তা ছাড়া নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলারেও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করা যাবে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই কম দামে অন্য কোনো দেশ থেকে তেল আমদানি করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
‘পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধের পদ্ধতি’ পর্যালোচনা করতে গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সভাপতিত্বে বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থসচিব, জ্বালানিসচিবসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ওষুধশিল্পের স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেক্সিমকো, এক্মি, এসিআই, রেনাটা, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানি পর্যালোচনা করতে ১৬ আগস্ট একনেক সভায় নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রুবলের সঙ্গে টাকার বিনিময়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা যায় কি না, সেই উপায় খুঁজে দেখার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। উল্লেখ্য, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের।
রাশিয়া থেকে তেল আমদানিতে সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে গতকালের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে আলোচনা হয়, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বেশ কঠিন। প্রক্রিয়াও জটিল। দেশটি তাদের নিজস্ব মুদ্রায় তেল রপ্তানির আগ্রহ দেখিয়েছে। চাইলে ডলারেও পরিশোধ করা যাবে। কিন্তু তেল আমদানিতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল জোগান দেওয়া বাংলাদেশের জন্য কঠিন হবে। রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ততটা নেই। সবচেয়ে বড় বিষয়, দেশটি থেকে তেল আমদানি করলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিও মাথায় রাখতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আমরা জানতে চেয়েছি, রাশিয়া থেকে কোন পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আর কোন পণ্যে নিষেধাজ্ঞা নেই। জানতে পারলাম, জ্বালানি তেলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তেল আমদানি করতে পারব না।’ তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়ছে। তাই যেসব জায়গায় তেলের দাম কম, সেখান থেকে তেল আমদানি করতে হবে।