শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হয়। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে বলতেই হবে যে আমাদের জাতির মেরুদণ্ড ভালো নেই। এক সময় বলা হতো, বৃটিশরা ভারতবর্ষে কেরানি তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু বিদায় বিদায় হওয়ার পর আমরা দুটি দেশের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। প্রথমে পাকিস্তান। তারপর রক্তের দামে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন।
বৃটিশের শিক্ষা যদি কেরানি তৈরির হয়ে থাকে তাহলে এখনকার শিক্ষাকে কি বলা হবে? বর্তমান দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে, তা কি মানুষ গড়ছে? পাকিস্তান আমল থেকে শুর করে শেখ হাসিনার সরকার পর্যন্ত কত শিক্ষা কমিশন হলো কত শিক্ষা নীতি হলো, সেগুলোর পক্ষে বিপক্ষে আন্দোলন হলো, গণবিরোধী শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ছাত্রদের রক্তও দিতে হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক একমুখী শিক্ষা চেয়ে শেষপর্যন্ত আমরা যে শিক্ষা নীতি পেয়েছি, তা না একমুখী, না প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞানভিত্তিক। কেতাবে নীতির কথা যা লেখা আছে, বাস্তবে তা-ও আছে বলে আমার অন্তত মনে হয় না।
আমাদের দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে, উচ্চশিক্ষিত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। একসময় মেয়েরা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে থাকলেও এখন আর খুব পিছিয়ে নেই। সংখ্যায় হয়তো সমতা পুরোপুরি না হলেও কাছাকাছি আসা গেছে। উচ্চশিক্ষায় হয়তো মেয়েদের সংখ্যা এখনও সাম্যের থেকে অনেক দূরে। কিন্তু এসবই তো বাইরের। দেশে সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম নেই। স্কুল কলেপজ মাদ্রাসা বাড়ছে। কোথাও কোথাও অপরিকল্পিতভাবেও বাড়ছে। শিক্ষার মান বাড়ছে না। শিক্ষা লাভ করে মানুষ কুসংস্কার মুক্ত হতে পারছে না। উদারতার শিক্ষা নয়, সংকীর্ণতা ও বিভক্তির শিক্ষারই যেন বিস্তার ঘটছে।
আমি শিক্ষা নিয়ে মতামত দেওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি নই। তারপরও এই লেখাটি লিখছি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত আমার কিছু পরিচিত সহৃদ-সুজনের অনুরোধে। তারা মনে করেন গোড়ায় গলদ রেখে কাজ করলে ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে এখন সমস্যা বহুমুখী। একেবারে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষ পর্যন্ত গলদ কোথায় নেই?
শিক্ষকদের মধ্যে যারা আন্তরিক, যারা সীমিত সুযোগেরও সদ্ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ভেতরে আলো ছড়াতে চান, তাদের জীবন যদি হয় সমস্যা সংকুল, তাহলে তারা শিক্ষার্থীদের কি পাঠদান করবেন? নিজের ও পরিবারের জন্য সম্মানজনক একটি বেতন-ভাতা না পেলে একজন শিক্ষক কীভাবে উন্নত জীবনের পাঠদানে উৎসাহ পাবেন? প্রাথমিক শিক্ষকের বেতন ভাতা কোনোভাবেই সম্মানজনক বলা যাবে না।