সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সংগঠন গোছাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। আগে নগরের নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয় ঘিরে মাঝেমধ্যে তাদের কর্মসূচি পালিত হতো। তবে এক মাস ধরে দলীয় কার্যালয়ের বাইরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় মিছিল, সভা-সমাবেশ করছে দলটি। এসব কর্মসূচিতে জনসমাগম দেখে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে।
দীর্ঘদিন পর নগরের লালদীঘি মাঠের পাশে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বরে গতকাল সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। এ ছাড়া সম্প্রতি নগরের অন্যতম বৃহত্ মাঠ পলোগ্রাউন্ড, চট্টগ্রাম পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চত্বর, কাজীর দেউড়ি মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতার পাশাপাশি চট্টগ্রামের নেতারাও অংশ নিচ্ছেন।
নগর বিএনপির নেতারা জানান, বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউড়ির কাছের দলীয় কার্যালয়ের বাইরে সভা-সমাবেশ করতে গেলে প্রায়ই প্রশাসনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ের ভেতরে ও সামনে নানা শর্তসাপেক্ষে কর্মসূচি পালন করতে হতো। এর পরও নানা বাধা আসত। চট্টগ্রাম বিএনপিকে অনেকটা চার দেয়ালের মধ্যে (দলীয় কার্যালয়) কর্মসূচি পালন করতে হয়েছে। জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলোতে প্রত্যাশার অনেক বেশি জনসমাগম ঘটছে। এর মধ্যে ১২ আগস্ট কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে গেলে প্রশাসন থেকে বলা হয়, ভেতরে করতে হবে। ওই দিন শুক্রবার হলেও সভাটি শেষ পর্যন্ত সমাবেশে রূপ নেয়।
একাধিক দলীয় নেতা জানান, আগে মহানগর বিএনপি মাঝেমধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী সভা-সমাবেশ করতে পারলেও চলতি মাসে ১২ থেকে ১৫টি ছোট-বড় কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়া নগরের প্রতিটি ওয়ার্ড ও থানায় দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি সংগঠন গোছানোর কাজও এগিয়ে চলছে ।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক কেন্দ্রীয় বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নগরে আমাদের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। আগে মিছিল-সমাবেশ করতে দিত না, কথা বলতে দেওয়া হতো না, মানুষের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে কর্মসূচি পালন করতে চাইলে বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়া হতো। কিন্তু এক মাস ধরে আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে পারছি। ’ তিনি আরো বলেন, ‘সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমে আসছে। আমরা আন্দোলন কর্মসূচির সঙ্গে আগামী এক মাসের মধ্যে নগরের ১২৯টি সাংগঠনিক ইউনিটের সম্মেলন করার উদ্যোগ নিয়েছি। ’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও দল পুনর্গঠন টিমের প্রধান এম এ আজিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বললেও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও অনেক মামলা-মোকদ্দমা করা হয়েছে। এ কারণে মানুষের মধ্যে এত দিন এক ধরনের ভয়ভীতি ছিল। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর ক্রয়ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিএনপির জনসম্পৃক্ত এসব কর্মসূচিতে জনস্রোতের কারণে বাধাবিপত্তি উঠে গেছে। সাধারণ মানুষের ভয়ভীতিও এখন কেটে গেছে।