হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র তকমা ঘুচিয়েছি আমরা অনেক আগে। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়ন আর কোন চমক নয়। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৈহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক তার প্রকাশিত পলিসি ম্যাগাজিন ‘হোয়াইট বোর্ড’-এ যথার্থ বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন চমকের বদলে বর্তমানে ‘বাংলাদেশ মডেল’ বলার সময় এসেছে।
বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা অনুন্নত দেশগুলোকে ‘বাংলাদেশ মডেল’ অনুসরণের কথা বলেছে। সেই তালিকায় নতুন রে যুক্ত হলেন ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমসের আফ্রিকা বিষয়ক সম্পাদক ডেভিড পিলিং। সম্প্রতি প্রকাশিক তার এক প্রতিবেদনে আফ্রিকার দেশগুলোকে বাংলাদেশকে আদর্শ উদাহরণ হিসেবে মনে করা উচিত বলে জানান।
তিনি জানান, বাংলাদেশের কাছ থেকে উন্নয়নের সহজপাঠ নিতেই পারে দুনিয়ার বহু দেশ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বাংলাদেশ অন্যদের শেখাতে পারে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে কীভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হয়। ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস’-এ এমনই মন্তব্য করেছেন ডেভিড পিলিং।
পত্রিকাটির পরিসংখ্যান মতে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৫০০ ডলারেরও কম। গড়ে ৪.৫টি সন্তান প্রসব করতেন এই দেশের নারীরা। ৪৪ শতাংশেরও বেশি মানুষ অতিদারিদ্রতার নীচে বসবাস করতেন। সেই পরিস্থিতি থেকে সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে। মাথাপিছু মোট দেশজ উতপাদন আট গুণ বেড়েছে। প্রজনন গড় এখন কমে দাঁড়িয়েছে দম্পতি পিছু ২ । ফলে শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা অন্যান্য বিষয়ে আরও বেশি অর্থ খরচ করার সুবিধা পাচ্ছেন অভিভাবকরা। ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ শিল্পায়নের সুযোগ করে দিচ্ছে। ব্রিটিশ পত্রিকাটিই বলছে, অতি দারিদ্রতার নিচে বসবাসকারীদের সংখ্যা আগের তুলনায় এখন নেমে এসেছে অর্ধেকে।
পাশ্চাত্যের অভিজাত গণমাধ্যমটির মতে, নারীদের সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশে। মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলে পুরুষদের তুলনায় এখন নারীরাই সংখ্যায় বেশি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় দেশে প্রতি ৫ জন শিশুর একজন ৫ বছরের কম বয়সেই মারা যেত। এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি ৩০ জনে এক।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের সাফ কথা, কোনও দেশের উন্নয়নকে নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচার উচিত নয়। তারাও স্বীকার করেছে বাংলাদেশ এখনো দরিদ্র দেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, পরিবেশগত বিপদ এবং ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হচ্ছে দেশটিকে। অতি সম্প্রতি দেশের আর্থিক সঙ্কট নিরসনে আইএমএফের কাছে ঋান চাওয়ার বিষয়টিও তাদের নজর এড়ায়নি। কিন্তু উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। হেনরি কিসিঞ্জারের 'তলাবিহীন ঝুড়ি' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারাকে যেভাবে বেগবান করতে সক্ষম হয়েছে তার প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেনি পত্রিকাটি।