কিছু জাতীয় পত্রিকায় দেখলাম ডিসি ও ইউএনওরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নজরদারি করবেন। পত্রিকায় আরো দেখলাম, ডিসি সম্মেলনে তারা নাকি এটি দাবি করেছেন। তারা দাবি করলে সরকার তাদের কথা সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। বিষয়টি যেহেতু দুর্বল শিক্ষকদের ওপর ঘটতে যাচ্ছে, তাই এ নিয়ে তেমন কথাবার্তা, আলোচনা বা সমালোচনা দৃষ্টিগোচর হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা নতুন করে আবার কী পরিদর্শন করবেন, নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কর্তৃত্ব ফলানোর কী আছে? বর্তমানেও তো তারাই দেখছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার তারা কি এখন ইউএনও ও ডিসিদের সামনে পাত্তা পাচ্ছেন? পাচ্ছেন না। একে তো প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে এবং প্রটোকলের দিক থেকে তারা এমনিতেই ওপরে। বর্তমানের উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসাররা তাদের পরামর্শ নিয়েই কাজ করেন। তার পরও আবার অতিরিক্ত নজরদারির বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) দুটি ক্ষেত্রেই ক্যাডার সার্ভিস করা উচিত।
এটি আমি অনেকবার লিখেছিও। ক্যাডার সার্ভিস না হলেও কিন্তু তারা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সে বিষয়টিতেই রয়েছে অনেক ঘাটতি। তাদের কর্মপরিধিতে একাডেমিক বিষয়টি যদি যথাযথ গুরুত্ব পেত, তাহলে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অন্যান্য উপদ্রব কম থাকত, ইউএনও ও ডিসিদের আলাদা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখভালের কথাও হয়তো উঠত না। আমাদের শিক্ষা কর্মকর্তাদের দৃষ্টি থাকে অন্যদিকে, শিক্ষার মান নিয়ে তাদের খুব একটা উদ্বিগ্নতা পরিলক্ষিত হয় না। তবে এটি সত্য, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব কমিটি আছে অনন্য ব্যতিক্রম ছাড়া শিক্ষা উন্নয়নে তাদের ভূমিকা নিয়ে বিশাল প্রশ্ন আছে। পত্রিকার পাতায় আমরা প্রায় প্রতিদিনই দেখি, কমিটির লোকজন ও সভাপতি কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত হচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি কর্তৃক শিক্ষক লাঞ্ছিত হলে শিক্ষার আর কি থাকে? অতএব এসব অদক্ষ ও পেশিশক্তি প্রদর্শনকারী কমিটির চেয়ে ইউএনও ও ডিসি কর্তৃক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখভাল করা হাজার গুণে ভালো। তাই কিছু শিক্ষক এতে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু শিক্ষকরা নিশ্চিত হতে পারছেন না, এটি কি কোনো ভালো উদ্দেশ্যে না খারাপ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। তাদের সন্দেহের বহু কারণও আছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ একটু খোলাসা করে বললে সবার জন্য সুবিধা হতো।