অর্থ মন্ত্রণালয় বলে কী, আর জ্বালানি মন্ত্রণালয় করে কী! অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এ মুহূর্তে সরকারের এক নম্বর কাজ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। আর জ্বালানি মন্ত্রণালয় করল কী-নজিরবিহীনভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দিল।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ‘পণ্ডিতরা’ কি জানেন না তেলের দাম বাড়ালে মূল্যস্ফীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে? এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে তারা এটা জানেন না। এটা জেনেও তারা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেন মাত্রাতিরিক্ত হারে। তাও আবার কী? অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
যুগান্তরের রিপোর্টার লিখেছেন, ‘বিপিসি অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত না নিয়েই জ্বালানি তেলের রেকর্ড পরিমাণ দাম বাড়িয়েছে।’ এটা কী করে হয়? মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত এত বড় একটি সিদ্ধান্ত-তা অর্থ মন্ত্রণালয় জানবে না? সব সম্ভবের দেশে এটাও হলো! হলো মানে নজিরবিহীনভাবে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম বাড়ানো হলো। ‘
মন্ত্রী বললেন, তাছাড়া নাকি উপায় ছিল না। কিন্তু প্রশ্ন, মন্ত্রী মহোদয় কি জানেন না সরকারের লক্ষ্য কী? তিনি কি জানেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সংবাদ সম্মেলন করে কী বলেছেন? বলেছেন, তার প্রথম কাজই হলো মূল্যস্ফীতি রোধ করা। এখন এ ‘বেচারা’ যাবেন কোথায়?
কী জবাব দেবেন তিনি দেশবাসীকে? জবাব তো তাকে দিতেই হবে, কারণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা তার আইনি দায়িত্ব, বাংলাদেশ ব্যাংককে এই দায়িত্ব দিয়েছে সংসদ আইনের মাধ্যমে। অথচ দেখা যাচ্ছে, অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না। তার মানে বাংলাদেশ ব্যাংকও কিছু জানে না।
কেউ কেউ বলছেন, তারা জানলে হয়তো এত বড় মূল্যবৃদ্ধি ঘটত না। কত বড় বৃদ্ধি? স্বাধীনতার ৫০-৫১ বছরের মধ্যে এত বড় মূল্যবৃদ্ধি আর কখনো ঘটেনি। ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৮০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১১৪ টাকা। কেরোসিন তেলও ৮০ টাকা থেকে হয়েছে ১১৪ টাকা। পেট্রোল ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে লিটারপ্রতি ১৩০ টাকা।
অকটেনের দাম বেড়ে হয়েছে লিটারপ্রতি ১৩৫ টাকা, যা আগে ছিল ৮৯ টাকা। ভাবা যায়-কতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন হলে এমন ঘটনা ঘটানো যায়! তাও এমন এক সময়ে যখন নির্বাচন সামনে। অর্থ মন্ত্রণালয়ও না, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ও না, নির্বাচন সামলাতে হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তাকে কি কেউ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ঠেলে দিচ্ছে? জানি না, তবে বলাই চলে, এই মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে।