সাধন করার মতো কর্তব্য যখন মানুষের সামনে উপস্থিত হয় তখন জীবন অথবা মৃত্যু তার কাছে গৌণ হয়ে যায়। এর এক অনুপম দৃষ্টান্ত কর্নেল তাহের। স্বাধীনতার স্বপ্ন আর শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার সংগ্রামে জীবনকে নিবেদন করেছিলেন তিনি।
তাহেরের জন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে, বাবার চাকরির সূত্রে শৈশব-কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামে ও কুমিল্লায়। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে তিনি স্নাতক পাস করেন। সংসারের প্রয়োজনে স্বল্প সময়ের জন্য কর্মজীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে। কিন্তু শিক্ষকতার মতো মানুষ গড়ার কাজের চেয়েও মানুষের মানুষকে জাগানোর কাজ তাকে আকর্ষণ করেছে বেশি। তাই চট্টগ্রামের বীর সন্তানরা যারা জীবন দিয়ে পরাধীন দেশে জীবন জাগানোর লড়াই করেছিলেন তাদের জীবনসংগ্রাম তাকে আকৃষ্ট করেছিল। মিরেরসরাই এ স্বদেশি আন্দোলনের নেতাদের আত্মগোপন ও সংগ্রামের ঘটনা তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। শৈশবে দেখেছিলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আর যৌবনে দেখেছেন পাকিস্তানের বৈষম্য। তিনি দেখলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হলো কিন্তু বাঙালি সহ-সাধারণ মানুষের জীবনে স্বাধীনতা এলো না বরং চেপে বসল অপমানের বোঝা। পশ্চিম পাকিস্তানের আচরণ থেকে এ দেশের মানুষ বুঝেছিল তারা পূর্ব পাকিস্তানকে কী রকম অবজ্ঞার চোখে দেখে। তাহের তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেও বুঝলেন মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই এ কথা যত জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করা হোক না কেন মুসলমান হলেই ভাই হওয়া যায় না। চট্টগ্রামের ঝাউতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিহারিদের আচরণ আর শাসকদের বক্তব্যের মাধ্যমে তার কাছে এটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল দিন দিন।