নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক এবং সমাজচিন্তক। বাল্যবেলার একটা অংশ অতিবাহিত হয় তত্কালীন পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায়। বিশ্বব্যাপী তার পর্বতপ্রমাণ খ্যাতির পেছনে সেই সময়ের কিছু ঘটনা প্রবল প্রভাব রেখেছিল বলে মনে করা হয়। তখনকার ঢাকায় সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এক দিনমজুরের নৃশংস মৃত্যু অমর্ত্য সেনের ভবিষ্যৎ দর্শন নির্ধারণে বড় ভূমিকা রেখেছিল, এমন কথা সম্ভবত অতিরঞ্জন হবে না। আমরা জানব, সে ঘটনা এবং দর্শনের কথা যেটা তিনি তার আত্মজীবনীতে বিধৃত করেছেন।
এক.
১৯৪৪ সালের এক বিকাল অমর্ত্য সেন স্কুল ছুটিতে শান্তিনিকেতন থেকে ঢাকায় ফিরে এসে তাদের ওয়ারীর ‘জগত কুটির’ বাড়ির বাগানে একাই খেলছিলেন। এমন সময় হঠাৎ বাড়ির প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে পড়ল একজন লোক—বুকে ও পিঠে মারাত্মক ছুরিকাঘাতে শরীর থেকে রক্ত ঝরছে এবং তিনি তীব্র ব্যথায় আর্তনাদ করছেন। লোকটির নাম কাদের মিয়া, পেশায় দিনমজুর। অমর্ত্য সেনের বাড়ির অনতিদূরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকার কোনো এক বাড়িতে অতি ক্ষুদ্র পারিশ্রমিকে কিছু কাজ সেরে যখন বাড়ি ফিরছিলেন, রাস্তায় সাম্প্রদায়িক গুণ্ডারা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আহত ও তীব্র বেদনায় কাতরানো কাদের মিয়া বাগানে উপস্থিত বালকের কাছে একটু পানি ও সাহায্য চাইলে সেই মুহূর্তে হতভম্ব অমর্ত্য সেন দৌড়ে পানি আনতে গেলেন এবং চিত্কার করে বাবা-মাকে ডাকলেন। তার বাবা আশুতোষ সেন তাড়াহুড়ো করে কাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। কিন্তু হায়, ছুরিকাঘাত থেকে বেঁচে থাকতে পারলেন না কাদের মিয়া।