অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটি আমেরিকা ও ইউরোপের ধনবৈষম্যের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেছেন তাঁর সাম্প্রতিক একটি গবেষণায়। সেখানে তিনি দেখাচ্ছেন, আমেরিকার ১০ ভাগ মানুষ মূলত সে দেশের ৭০ শতাংশ সম্পদের মালিক। বাকি ৪০ শতাংশ মানুষ ৩০ ভাগ সম্পদের মালিক। আর বাদবাকি ৫০ ভাগ মানুষের বাস্তবে কোনও সম্পদ নেই। ওপরের ওই ৭০ শতাংশ সম্পদের মালিক ১০ শতাংশ মানুষ ও ৩০ শতাংশ সম্পদের মালিক ৪০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ সর্বমোট ওই পঞ্চাশ শতাংশের সম্পদ থেকে চুইয়ে আসা ২ শতাংশ সম্পদের মধ্যেই জীবনযাপন করে বাদবাকি নিচের তলার ৫০ শতাংশ মানুষ। ইউরোপে অবশ্য এই বৈষম্যের অবস্থা আমেরিকার থেকে একটু কম। অর্থাৎ সেখানে ১০ ভাগ লোক ৬০ শতাংশ সম্পদের মালিক আর ৪০ ভাগ বাকি ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিক। সেখানে নিচু তলার ওই পঞ্চাশ শতাংশের জন্যে ওপর তলা থেকে নানাভাবে আসে ২ থেকে ৫ শতাংশ সম্পদ।
টমাস পিকেটি’র গবেষণা মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ঘিরে। কিন্তু তাঁর এই গবেষণার ওপর ভিত্তি করে ওই দেশগুলোর সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোরও নানাদিক বিশ্লেষণ করা যায়। বাস্তবে আমেরিকার ওই ৭০ ভাগ সম্পদের অধিকারী যে দশভাগ লোক তারা সমাজে ও রাষ্ট্রে উচ্চবিত্ত। আর ৩০ ভাগ সম্পদের অধিকারী যে ৪০ ভাগ মানুষ তারাই আমেরিকার মধ্যবিত্ত শ্রেণি। অর্থাৎ আমেরিকার মধ্যবিত্ত সে দেশের ৪০ ভাগ মানুষ। ঠিক এমনিভাবে ইউরোপেও মধ্যবিত্ত ৪০ ভাগ মানুষ। তবে ইউরোপের মধ্যবিত্তরা আমেরিকার মধ্যবিত্তের থেকে বেশি সম্পদের অধিকারী।
বাস্তবে কোনও রাষ্ট্রের ৩০ ভাগ বা ৪০ ভাগ সম্পদের অধিকারী হয়ে যখন সে দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত হয়, ওই মধ্যবিত্ত অনেক শক্তিশালী ও বড় আকারের মধ্যবিত্ত। আর ইউরোপ ১০ শতাংশের হাত থেকে গত একশ বছরে ৩০ ভাগ সম্পদ নিচে নেমে এসেছে ৪০ শতাংশ এই মধ্যবিত্তের কাছে। ১৯১০ সালের দিকে ১০ ভাগ মানুষের হাতেই ৯০ ভাগ সম্পদ ছিল। আমেরিকাতেও মধ্যবিত্তের দিকে সম্পদ প্রবাহের হার গত একশ বছরে ইউরোপের মতোই প্রায় একই হারে।