রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের শিক্ষার্থীরা সেদিন ভালো একটি কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২৫ জুন ঢাকার একটি জাতীয় পত্রিকার এ সংবাদটি স্বাভাবিক কারণেই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমার বিশ্বাস, আমার মতো আরও অনেকেরই সংবাদটি পড়ে ভালো লেগেছে। সংবাদটি হলো, ‘শাহ মখদুম হলের ডাইনিং হলে ৪২ বছর চাকরি শেষ করে গত ২৪ জুন বিদায় নেওয়ার সময় হলের শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হলেন তাদের প্রিয় মজিবর ভাই।’ হলের শিক্ষার্থীরা হলের কক্ষে কক্ষে গিয়ে টাকা তুলে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসনের সহায়তায় মজিবর রহমানের হাতে অনুদান হিসাবে তুলে দিলেন দুই লাখ টাকা। বিদায়বেলায় অশ্রুসিক্ত মজিবর রহমান ডাইনিং হলে কর্মরত তার সহকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। ভালো ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীরা মনে রাখবেন। উনষাট বছরের মজিবর রহমান তার অমায়িক ব্যবহারের দ্বারা শিক্ষার্থীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। তিনি তাদের কাছে বেশ প্রিয়ও ছিলেন।
করোনা-উত্তর গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার পর থেকে একের পর এক হল দখলের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত যে খবর পাওয়া যাচ্ছিল, তার মধ্যে শাহ মখদুম হলের ডাইনিং হলের স্টাফ মজিবর রহমানের বিদায়ক্ষণে শিক্ষার্থীদের এরূপ দৃষ্টান্ত স্থাপন নিঃসন্দেহে একটি ভালো সংবাদ। ভালো সংবাদ বলছি আরও একটি কারণে, বিদায়ক্ষণে মজিবর তার সহকর্মীদের যে উপদেশ দিয়ে গেলেন, তা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলবাজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অনেক কিছুই শিক্ষা নেওয়ার আছে। ভালো ব্যবহারে মানুষের মন জয় করা যায়, এ সহজ কথাটি হলের নিু বেতনভুক ডাইনিং স্টাফ মজিবর রহমান বুঝলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বোঝেন না তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। অথচ বিগত কয়েক মাস ধরে আমরা কী দেখেছি? গত বছর করোনার শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়ার পর ছাত্রলীগ আসন দখল করতে আবাসিক হলে তালা মারতে শুরু করে। এরপর একের পর এক বৈধভাবে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের নানা কায়দায় জোরজবরদস্তি হলছাড়া করে।
বৈধভাবে হলে ওঠা শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ কর্তৃক হলছাড়া করার ছোট্ট একটা ফিরিস্ত এখানে দেওয়া যেতেই পারে। গত ২৩ অক্টোবর শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫৬ ও ৪৭৬ নম্বর কক্ষ থেকে দুজনকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। ৮ ডিসেম্বর রাতে এক শিক্ষার্থীকে হলছাড়া করে। এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাদার বখশ হলের ১৫৩ নম্বর কক্ষ থেকে এক শিক্ষার্থীকে, ১২ এপ্রিল শেরেবাংলা একে ফজলুল হক হল থেকে একজন, ১৭ মে শহিদ হাবিবুর রহমান হল থেকে একজন, একই হল থেকে ২৮ মে অপর এক শিক্ষার্থী, ২ জুন রাতে শহিদ শামসুজ্জোহা হল থেকে একজন, ১৪ জুন নবাব আবদুল লতিফ হল থেকে একজন, সর্বশেষ একই হল থেকে ২৩ জুন গভীররাতে মারধর করে মুন্না ইসলাম নামে একজন শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগে বাধ্য করে। এ ছাড়া ১৬ জুন শহিদ সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্রলীগ তাদের নেতার সিট দখল করাকে কেন্দ্র করে হলের গেটে তালা মেরে দিয়েছিল। ১৮ জুন বখশ হলে কক্ষ দখল নিতে তালা ঝুলিয়ে দেন এক ছাত্রলীগ নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এভাবেই শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছেন। ফলে যাদের নামে আসন বরাদ্দ আছে, তারা হলে থাকতে পারছেন না। থাকছেন ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগতরা।