সম্প্রতি বাংলাদেশের সিলেটসহ কিছু এলাকা মারাত্মক বন্যার কবলে পড়ায় জনজীবন ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকা আজ বন্যাকবলিত, ব্যাপক বন্যায় বহু গ্রাম, শহর, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি অসংখ্য মানুষ। বানভাসি জনগণের দুঃখ-দুর্দশা অসহনীয় এবং লাখ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং টয়লেট সুবিধার মারাত্মক ঘাটতির কারণে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মারা যাছে শিশুসহ অনেকে, ক্ষতি হচ্ছে ফসলের, বহু মাছচাষের পুকুর নষ্ট হয়ে বহু ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
বাঁধের মতো সুরক্ষা অবকাঠামোগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় এমনিতেই গত দুবছরে বাংলাদেশের নাভিশ্বাস অবস্থা, এর মাঝে এ ধরনের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা সত্যই বাস্তবতার নিরিখে খুবই কষ্টসাধ্য। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনাতেও একটি বিপর্যয়ের ঝুঁকি থেকে যায়। করোনারও এখন ঊর্র্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে, বিশেষত জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করার জন্য শারীরিক দূরত্বের মতো পদক্ষেপগুলো পালন করা প্রয়োজনীয় হলেও তা বাস্তবসম্মতভাবে করা সম্ভব নয়। বন্যার জলাবদ্ধতা, টিউবওয়েলের পানি দূষিত পানির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় এবং কোভিড-১৯ মহামারি একই সঙ্গে থাকায় বন্যাকবলিত মানুষের ওপর এক মারাত্মক দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সুতরাং এবারের বন্যাকে আগের তুলনায় নিঃসন্দেহে জটিল করে তুলছে। স্বাস্থ্যবিধি অর্থাৎ শারীরিক দূরত্ব এবং হাত ধোয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন আক্রান্ত মানুষ বা বাস্তুচ্যুত ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকাদের মধ্যে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।
হাজার হাজার ল্যাট্রিন এবং নলকূপের পাশাপাশি ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কয়েকটি জেলা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শিশুদের লেখাপড়া ব্যাহত হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকে প্রাণ হারিয়েছে, বেশির ভাগ মৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া এবং এর মধ্যে শিশুরাও ডুবে মারা যাচ্ছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় যাতায়াতের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রান্তিক জনগণের মাঝে টিকাদানসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়েছে। এতে মৃত্যুর ঝুঁকি, পানিবাহিত ও অন্যান্য রোগব্যাধি, পুষ্টির অভাব এবং বন্যার্তদের মধ্যে করোনা মহামারি বাড়িয়ে তুলতে পারে।