তিনটা নয়, বছর শেষ হবে দুই সেমিস্টারে— বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির এমন নির্দেশনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তারা বলছেন— নতুন পদ্ধতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তার চেয়ে বিদ্যমান পদ্ধতিই বহাল রাখা হোক। এই নির্দেশনা নতুন করে বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অসন্তোষ তৈরি করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বছরে দুটি সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। তারা বলছে—২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে। এটা করার এখতিয়ার নেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)।
২০২১ সালের ৯ আগস্ট দুই সেমিস্টারে ভর্তির নির্দেশনা দিয়েছিল ইউজিসি। বলা হয়েছিল— কোনোক্রমেই ২০২১ সালের পর বছরে দুই সেমিস্টার ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি কমিশনের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী জুলাই থেকে দুই সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তির করাতে হবে। তবে বছরে দুটি সেমিস্টারে ভর্তির বাধ্যবাধকতা না রেখে তিন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি অব্যাহত রাখতে ইউজিসিকে পত্র দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে ইউজিসিকে চিঠি দিয়েছি। আলাপ-আলোচনা চলছে। দেখা যাক।’
ইউজিসির এই নির্দেশনাকে অপকৌশল উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। অ্যাকাডেমিক বিষয়ে এমন নির্দেশনা দেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ানো হয়েছে। এই নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর ইউজিসির এক ধরনের খবরদারি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন সেমিস্টার পদ্ধতি থেকে দুই সেমিস্টারে গেলে তেমন কোনও লাভ হবে না। বরং নতুন করে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কোনও সমস্যা থাকলেও তা ঠিক করার জন্য এটি কাজে লাগবে না। এমনটাও নয় যে শিক্ষার্থীরা দুই সেমিস্টার চাচ্ছে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে, তা-ও নয়। পক্ষান্তরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামানোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ভূমিকা রাখতে পারে। আমেরিকার মতো উন্নত দেশেও দুই সেমিস্টার এবং তিন সেমিস্টার পদ্ধতি বিদ্যমান। তাহলে বাংলাদেশে অভিন্ন পদ্ধতি কেন জরুরি হবে?
অভিভাবকরা বলছেন, নতুন পদ্ধতি চালু করে কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক এমনটা কেউ চায় না। দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে দুইবারে একসঙ্গে অনেক টাকা দিতে হবে। এতে অভিভাবকরা চাপে পড়বেন। তিনবারে টাকা দিলে চাপ কিছু কম হয়। তাছাড়া দুই সেমিস্টার পদ্ধতিতে কী লাভ তাও স্পষ্ট নয়।