রোহিঙ্গা সংকট বৈশ্বিক সংকট হলেও বাংলাদেশ যেভাবে মোকাবিলা করে আসছে সেভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন আমরা দেখছি না বললেই চলে। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সমকালে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির আশঙ্কা উদ্ৃব্দত করে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা আমাদের সংগতই উদ্বিগ্ন করে। বুধবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের ঘটনায় রোহিঙ্গা তহবিলে সংকট হতে পারে। তিনি যথার্থই বলেছেন, অন্য কয়েকটি দেশে কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিলেও বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো দেশেরই তুলনা করা যায় না। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো বিদ্যমান রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এ পর্যন্ত যা কিছু করেছে তাতে কার্যত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমরা মনে করি, গত পাঁচ বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বাংলাদেশ যে সংকট মোকাবিলা করছে, এর নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের মানবিকতার তাগিদে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়ে যে উদারতার পরিচয় দিয়েছিল, তা বিশ্বে প্রশংসনীয় হয়। বাংলাদেশে এখন সব মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয়। অস্বীকার করার উপায় নেই, কক্সবাজারের বিভিন্ন শিবির ও নোয়াখালীর ভাসানচরে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে নানামুখী চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের কিছুদিন পরই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন চুক্তি হওয়ার পর মনে হয়েছিল, দুই দেশের সমঝোতার মাধ্যমে কোনো ধরনের সংকট ছাড়াই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিজ ভূমে ফিরে যাবে এবং সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। বস্তুত তা তো হয়ইনি, উপরন্তু দফায় দফায় আরও সমঝোতার পরও মিয়ানমারের বৈরী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য যে সংকট গভীর করে তুলেছে, বিশ্ব সম্প্রদায় এর দায় এড়াতে পারে না।