জিন্স প্যান্ট ও টপস পরার কারণে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী নরসিংদী রেলস্টেশনে যেভাবে হেনস্তা, লাঞ্ছনা ও মারধরের শিকার হয়েছেন, তার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। নরসিংদীতে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে বন্ধুদের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানে প্রকাশ্য দিবালোকে রেলস্টেশনের মতো জনপরিসরে এমন মধ্যযুগীয় ঘটনা ঘটতে পারে- এটা কল্পনা করা কঠিন হলেও বাস্তবে সেটাই ঘটেছে।
সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জেনেছি, স্টেশনে আক্রান্তদের অপরিচিত দু'জন নারী প্রথমে এসে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে থাকেন। এর পর কয়েকজন পুরুষসহ নারীরা তাঁদের মারধর করেন। শুধু তাই নয়; উল্টো তাঁদের দিয়ে হেনস্তাকারী ওই নারীদের কাছে জোরপূর্বক 'ক্ষমা' চাওয়ানো হয়। প্রশ্ন জাগে, হামলাকারীরা কি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র? কোনো জঙ্গিবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত? নারী শিক্ষার্থীর লাঞ্ছনার বিচারের পাশাপাশি এসব দিকও গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখতে হবে বৈ কি।
এখানেই শেষ নয়। লাঞ্ছনার শিকার ওই তরুণী এ ঘটনার বিচার চাইতেও ভয় পাচ্ছেন। হেনস্তার শিকার হয়ে উল্টো সোশ্যাল মিডিয়ায় বুলিং ও ট্রলের শিকার হন কিনা! তাঁর আশঙ্কা যে সত্য, হেনস্তার ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত। যারা এই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে আনন্দ পাচ্ছে তাদের ঘরে কি বোন নেই, স্ত্রী নেই; মা নেই? নারীর সম্মান রক্ষার শিক্ষা কি তারা পরিবার থেকে পায়নি? কীভাবে তারা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে অপমান করার ভিডিও ছড়িয়ে মজা পায়! সাইবার ক্রাইম ও বিটিআরসির উচিত এসব ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। একই সঙ্গে এসব ভিডিও মুছে ফেলার ব্যবস্থা বিটিআরসিকে করতে হবে। যদি তাদের সেই সক্ষমতা না থেকে থাকে তাহলে নতুন প্রযুক্তি সংযোজনের প্রয়োজন এসে যায়। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। অথচ আপত্তিকর ভিডিও মুছতে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে হয়। বিটিআরসির উচিত তাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে এসব আপত্তিকর ভিডিও মুছে ফেলার টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিশ্চিত করা।