গত ১২ মে ছিল সাতবাড়িয়া গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে গ্রামবাসীর ওপর নির্মম হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও লুটপাট চালায় দখলদার পাকিস্তান বাহিনী। সেই ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরছি এখানে। ১১ মে বিকালে পদ্মার চর থেকে গ্রুপের সবাইকে ছেড়ে বাড়ি এলে মায়ের পীড়াপীড়িতে রাতে বাড়িতেই থাকতে হয় আমাকে। কিন্তু অজানা আতঙ্কে বারবার ঘুম ভেঙে যায়। ভোরে ফজরের আজানের সময় ঘর ছেড়ে বাড়ির সামনে মাঠের খোলা বাতাসে একটা চেয়ার নিয়ে বসি। তখনো অন্ধকার। এমন সময় স্থানীয় হাইস্কুলের কেরানি বাবু বিমল চৌধুরী একটি কাপড়ের ব্যাগ হাতে আমাদের বাড়িতে এলেন। আমাকে খুব আস্তে আস্তে বললেন, ‘তোর বাবাকে একটু তাড়াতাড়ি ডেকে দে।’ আমার বাবাকে ডাকতেই তিনি বাইরে এলে বিমল চৌধুরী তার সঙ্গে খুব সংগোপনে কিছু কথা বলেই দ্রুত নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে রওয়ানা দিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পরপরই আমার বাবা আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ছেড়ে নদীর ধারে খেয়াঘাটে যেতে বলে হাঁটতে শুরু করলেন। আরও বললেন, মিলিটারি আসবে, খুব তাড়াতাড়ি এসো। শার্ট-লুঙ্গি পরা অবস্থাতেই বাবাকে ফলো করে হাঁটতে লাগলাম। প্রায় এক কিলোমিটার দূরে খেয়াঘাট।
যাওয়ার পথে আমার সহপাঠী স্বপনকে ঘুম থেকে ডেকে উঠিয়ে বললাম-মিলিটারি আসছে, চল, চরে চলে যাই। স্বপন একটা হালকা নীল শার্ট হাতে নিয়ে খালি গায়ে আমার সঙ্গে দ্রুত খেয়াঘাটে চলে আসে। কিন্তু বারবার বলার পরও সে নদী পার হয়ে চরে যেতে রাজি হয় না। ওদিকে আমার বাবা ঘাটে একটা নৌকা ধরে রাখেন। সেই নৌকায় একটা হিন্দু পরিবার ছিল। আমাকে খুব তাড়া দিয়ে বাবা নৌকায় উঠিয়ে দেন। আমি নৌকায় উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার বাবা ও স্বপন কেউই নেই। তখনো সূর্য ওঠেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাঙার মানুষ মিলিটারি মিলিটারি বলে দৌড় শুরু করে। আমার বাবা এ স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ি এসে ছোট ভাইবোনদের নিয়ে দৌড়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। স্বপনও ওর বাবাকে দোকান থেকে ডেকে নিরাপদ স্থানের দিকে দৌড় শুরু করে।