বড় পর্দায় নায়িকা বলতেই আমাদের কল্পনা ছেয়ে যেত পরিচিত একটি দৃশ্যে। নায়িকা গুন্ডাদের দ্বারা আক্রান্ত। গুন্ডাদের সঙ্গে ঢিশুম ঢিশুম করে নায়িকাকে উদ্ধার করেছে নায়ক। অথবা বাগানে সমুদ্রের ধারে নায়িকা নায়কের হাত ধরে সুন্দর জামাকাপড় পরে নাচানাচি করছে। তবে গত এক দশকে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যতই রাজত্ব করেছে, ইতিবাচকভাবে বদলে গেছে সেসব চিত্র। নারীরা কেবল ‘সুন্দর উপকরণ’ বা ‘নায়কের অংশবিশেষ’ হিসেবে নয়, আত্মপ্রকাশ করেছে বৈচিত্র্যময়, ক্ষমতাবান সব মুখ্য চরিত্র হয়ে। এক দশকে ভারতের বড়, ছোট ও মাইক্রো (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) পর্দার নারীরা কীভাবে বদলে সেসব নিয়েই বিশেষ আলোচনায় অংশ নেন পর্দার ‘গেম চেঞ্জার’ নারীরা। সম্প্রতি এই বদলে দেওয়া, বদলে যাওয়া সময়ের নারীদের সঙ্গে এক প্রাণবন্ত আড্ডায় অংশ নেন ভারতের জনপ্রিয় বিনোদন সাংবাদিক অনুপমা চোপড়া। তারই উল্লেখযোগ্য আলোচনা থাকল এই লেখায়।
শেফালি শাহ (৪৮), বলিউড তারকা
৪৮ বছর বয়সে নারী অভিনয়শিল্পীদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় বলে ধারণা করেন অনেকে। অথচ সেই বয়সেই শেফালি শাহ আছেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে। ২০২১ সাল ছিল তাঁর ক্যামেরার সামনে ব্যস্ততম সময়। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া, সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত সিরিজ ‘দিল্লি ক্রাইম’–এ মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের পর তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। শেফালি বলেন, ‘আগে পর্দায় ১৮ থেকে ২২ বছর বয়সী একটা নায়িকা চরিত্র ছিল। যার করার তেমন কিছু ছিল না। অথবা একটি বয়স্ক মা ছিল। যে জানতই না সে না থাকলে এই সিনেমার কিছু আসবে যাবে কিনা। অথচ বাস্তবের নারী চরিত্রগুলো কিন্তু মোটেও তেমন নয়। আমি এখন ঘরে বসে জামাকাপড়ে ফিট হওয়ার চেয়ে দিব্যি আমার বয়সী সত্যিকারের সব চরিত্র করছি। আমি এখন ৪৮–এ দাঁড়িয়ে তরুণ আমির চেয়ে দুর্দান্ত সব কাজ করছি।’
ম্রুণাল ঠাকুর (২৯), বলিউড তারকা
বড় পর্দায় পা রাখার স্বপ্ন নিয়ে যাঁরা ছোট পর্দায় এসেছিলেন, আর ছোট পর্দা থেকে যাঁরা সফলভাবে বলিউডের বড় পর্দায় ডানা মেলেছেন, তাঁদের ভেতর ম্রুণাল অন্যতম। ম্রুণালের বাবা চেয়েছিলেন, মেয়ে যেন ডেন্টিস্ট হয়। আর ম্রুণাল চেয়েছিলেন অভিনেত্রী হতে। কিন্তু সাহস করে বাবাকে আর জানাতে পারেননি। বাবার ইচ্ছে অনুসারে ভর্তিও হয়েছিলেন ডেন্টাল কলেজে। ম্রুণাল যখন প্রথম বর্ষের ছাত্রী, সেই সময় মুক্তি পেল রাজকুমার হিরানি পরিচালিত ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমা। সেই সিনেমায় আর মাধবনের চরিত্রটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বাবাকে গিয়ে বলে দেন মনের কথা। ডেন্টাল কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে শুরু করেন মডেলিং আর অভিনয়। বললেন, ‘এখন আর কোনো “ফর্মুলা বা বক্স” নেই, যেখানে আমাকে ফিট হতে হবে। আমি নিজেকে ভেঙে-গড়ে নানাভাবে দেখতে পারি, দেখাতে পারি। নিজের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি।’