পুলিশ ভাইদের অসংখ্য ধন্যবাদ। তারা সৈয়দা রত্নার একটি পাড়ার আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলন বানিয়ে দিলেন। সেদিন আমাদের এক রিপোর্টার বলছিলেন, বাংলাদেশে তো আগেও অনেক মাঠ দখল হয়েছে, মাঠ দখলের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে যে আন্দোলন, আগে তো কখনও এমন হয়নি। এবার কেন এমন হলো? আমি তাকে বোঝালাম, মানুষ নানা কারণে ক্ষুব্ধ থাকে। সবসময় সব ক্ষোভ সে প্রকাশ করতে পারে না। ব্যক্তির অসহায়ত্ব তার ক্ষোভকে চাপা দিয়ে রাখে। কিন্তু সবসময় সব ক্ষোভ চাপা থাকে না। জমতে জমতে একসময় ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে। তবে সে বিস্ফোরণের জন্য চাই একটা স্পার্ক। তেঁতুলতলা মাঠের আন্দোলনে সেই স্পার্কটা দেওয়ার জন্য পুলিশকে ধন্যবাদ।
সৈয়দা রত্না আমাদের সবার মতো ক্ষোভ পুষে রাখার মানুষ নন। কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠ বাঁচানোর জন্য তিনি একাই আন্দোলন করছিলেন। খুবই যৌক্তিক আন্দোলন। কলাবাগান এলাকার মানুষের শ্বাস ফেলার একমাত্র জায়গাটি যাতে পুলিশ দখল করতে না পারে, সে জন্য তার আন্দোলন। কিন্তু তার সে একার আন্দোলন গণমাধ্যমে জায়গা পায়নি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়নি। তবু ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলোরে’ নীতি মেনে একাই আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু গত ২৪ এপ্রিল তেঁতুলতলা মাঠের সামনে থেকে লাইভ করার ‘অপরাধে’ সৈয়দা রত্নাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকেও তুলে নেয় পুলিশ। এখানেই পুলিশের চালে ভুল হয়েছে। সত্যের যে শক্তি, ন্যায্যতার যে শক্তি; তা টের পেতে তাদের বেশি সময় লাগেনি। মামলা ছাড়া মা ছেলেকে গভীর রাত পর্যন্ত থানায় আটকে রাখে পুলিশ। কিন্তু থানার গারদে এক কিশোরের দাঁড়িয়ে থাকার ছবি পাল্টে দেয় দৃশ্যপট। থানার সামনে প্রতিবাদের মুখে ১৩ ঘণ্টা পর মধ্যরাতে মা-ছেলেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। ছেলের কপালে মায়ের চুমুর ছবি ভাইরাল হয়েছে। অবশ্য মুক্তির আগে সৈয়দা রত্নাকে ‘আর আন্দোলন করবো না’ এই মুচলেকা দিতে হয়েছে। অবশ্য এখন আর রত্নাকে আন্দোলন না করলেও চলবে। যে আগুন তিনি জ্বালিয়ে দিয়েছেন, সে আগুন এখন ছড়িয়ে গেছে সবখানে। সৈয়দা রত্না আর একা নন। তার আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার এখন অনেক লোক। সারা দেশের বিবেকবান মানুষ তার পক্ষে।