তখন বেলা একটা। কারখানায় রাজ্যের ব্যস্ততা। সমানে চলছে বৈদ্যুতিক সেলাই মেশিন। শ্রমিকেরা কেউ নকশা তৈরি করছেন, কেউবা জুতায় আঠা লাগাচ্ছেন, আর কেউ কেউ জোড়ায় জোড়ায় প্যাকেটে ভরছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই কারও।
ঈদ সামনে রেখে সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের পূর্ব মাদারবাড়ির বেশ কয়েকটি জুতার কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের এ রকম ব্যস্ততা ও কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। এখানকার কারখানাগুলোর বিশেষত্ব হলো, তারা জুতা হাতে তৈরি করে, যা কারখানা থেকে সরাসরি চট্টগ্রামের স্থানীয় বাজার এবং ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। তবে এখানে জুতার কী পরিমাণ ব্যবসা হয়, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা হিসাব নেই। অবশ্য ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, শুধু ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামের কারখানাগুলোয় অন্তত ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। বছরের অন্যান্য সময়ে লেনদেন হয় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার মতো। কারণ, তাঁদের ব্যবসা মূলত ঈদকেন্দ্রিক।
চট্টগ্রাম নগরের পূর্ব মাদারবাড়িতে ১৯৮০ সালে এই হাতে তৈরি ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্পের যাত্রা শুরু হয়। পরে পশ্চিম মাদারবাড়ি, নালাপাড়া, নিউমার্কেট, মোগলটুলি প্রভৃতি এলাকায়ও কারখানা গড়ে ওঠে। বর্তমানে কারখানা আছে প্রায় ৪০০টি। এসব কারখানায় সব মিলিয়ে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। ১৯৯০ সালে এখানে গঠিত হয় ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্প মালিক গ্রুপ।
আলাপকালে সাকসেস সুজ নামের কারখানার মালিক মোহাম্মদ বেলাল প্রথম আলোকে জানান, ১৯৯৯ সালে তিনি পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকায় ছোট আকারে জুতার কারখানা গড়েন। বর্তমানে তাঁর কারখানায় কাজ করছেন ১৫ জন। নিজেরা যেমন বিভিন্ন নকশার জুতা তৈরি করেন তেমনি ক্রেতাদের দেওয়া ডিজাইন অনুযায়ীও জুতা বানিয়ে দেন। চট্টগ্রামের টেরিবাজার, নিউমার্কেট, হকার্স ও ফুটপাতের খুচরা ব্যবসায়ীরাই মূলত তাঁদের কাছ থেকে জুতা কিনে নেন।
মোহাম্মদ বেলাল জানান, এবার ঈদ সামনে রেখে তাঁরা ২০ রকমের জুতা তৈরি করেছেন। দাম শুরু হয় প্রতি ডজন ২ হাজার টাকা থেকে।
অন্য কয়েকটি কারখানার মালিক বলেছেন, ঈদের মৌসুমে চাঙা হয় হাতে তৈরি জুতার ব্যবসা। গত দুটি ঈদ মৌসুমে করোনার কারণে ব্যবসা করা যায়নি। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ঈদের আগে পয়লা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ উৎসব এসে যাওয়ায় জুতার বিক্রির বাড়তি সুযোগ মিলেছে। এককথায়, জুতার ব্যবসা করোনার ধকল কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।