ডায়রিয়ায় গত কয়েকদিনে মারা গেছে ২৫ জন, আইসিডিডিআর’বি দিয়েছে এই তথ্য। [আমাদের সময়/ ১০ এপ্রিল, ২২] আক্রান্তরা মহাখালীর কলেরা হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি দূরত্ব ও সড়কে তীব্র যানজটের কারণে। পথেই তারা মারা গেছেন।
দুটি বিষয় খুবই ভয়াবহ এই সংবাদের ভেতরে। এক. এই সময়ে, মানে গ্রীষ্মের প্রাক্কালে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকারে হয়, ফি-বছর আমরা দেখছি। কিন্তু নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারেনি ওয়াসা। দুই. ঢাকার সড়কগুলোতে যানজট। দশকের পর দশক যাচ্ছে ঢাকা মহানগর যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানজটও। এ দুটোর কোনো রেমেডি/সমাধান যেন নেই।
বলা যায় দায়িত্বশীলরা এই দুটি সমস্যাকে নিজেদের ও মহানগরবাসীর ললাটলিখন বলে ধরে নিয়েছেন। তাই তারা যতো জোর দিয়ে সমাধানের উদ্যোগের বর্ণনা দেন মিডিয়ায়, তত জোর ও তৎপরতা মেলে না তাদের কর্মতৎপরতায়- পরিকল্পনায় ও তার বাস্তবায়নে। তারা এই যানজট নিরসনের মিটিং করে চাকরি জীবনের ইতি ঘটাতেই যেন সংকল্পবদ্ধ।
ডায়রিয়ার বিষয়ে সরকারি হাসপাতালে ওয়ার্ড খোলা হয়েছে জানালেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক। তিনি বলেছেন, মুগদা ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। রোগীরা কেন মহাখালীতে যাবেন? তার কথা থেকে বোঝা যায় সরকার যেমন সজাগ, তেমনি হাসপাতালগুলোও, তারা প্রস্তুত। কিন্তু রোগীরা সেখানে না গিয়ে মহাখালীতে ছোটে। কারণ কী? কারণ, ওই হাসপাতালগুলোতে কলেরা বা ডায়রিয়ার চিকিৎসার জন্য নয়। তাই তারা জানেনও না যে সেখানে গেলে জীবন বাঁচানো যাবে কি না। সরকারি অধিদফতর তো আর ঢোল নিয়ে রাস্তায় নামবে না যে এসব হাসপাতালে ডায়রিয়ার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আজকাল প্রচারণা ছাড়া সেবা দেওয়া যায় না। এটা কি একবারও মনে হয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্তাদের?
ডায়রিয়ার মূল কারণ দূষিত পানি। এই মহানগরের দুটি এলাকা শনির আখড়া আর যাত্রাবাড়ী, দুটো এলাকাই পাশাপাশি বলা যেতে পারে, দূষিত পানি পানের কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ওই যে ২৫ জন মানুষ, চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মারা গেলো তার জন্য দায়ী যানজট। কিংবা বলা যায়, যে কর্তৃপক্ষ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রত তারাই ওই মৃত্যুর জন্য দায়ী।
শনির আখড়া ও যাত্রাবাড়ীর পানির লাইন কি এতোটাই খারাপ বা নষ্ট যে সেই পানি পানের অযোগ্য? কিন্তু ওয়াসার এমডি তো সংবাদ সম্মেলনে বললেন, যে চারটি জায়গা থেকে অভিযোগ এসেছিল, সেখানে তা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, না, ওয়াসার পানি দূষিত হয়নি। তবু তিনি পানি শোধন করে খেতে বলেছেন। পরামর্শ ও বুদ্ধি দেওয়া সহজ, কাজটা করা কঠিন।