প্রতি বছরই আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে একই পদ্ধতিতে খতম তারাবি পড়তে বিশেষ আহ্বান জানায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এতে তারাবির নামাজে প্রথম ছয় দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে ১ পারা করে ২১ পারা তেলাওয়াত করার প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে ২৭ রমজানে সব মসজিদে একযোগে পবিত্র কোরআন খতম হয়। এতে করে সবচেয়ে বড় সুবিধাটা হলো, একজন মুসল্লি দেশের যে কোনো মসজিদেই তারাবি পড়ুক না কেন, তাতে তারাবির নামাজে তার পুরো কোরআন শ্রবণে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না।
যেমন—যদি কোনো মুসল্লি ১৩ পারার দিন তথা দশম রমজানের তারাবি তার মহল্লার মসজিদে আদায় করে এবং পরের দিন অন্য কোনো মসজিদে তারাবি পড়ে, তাহলে নামাজে সম্পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত শোনার তার যে ইচ্ছে ছিল, তা অটুট থাকবে। কেননা, সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে অনুশীলন হচ্ছে। পরের দিন তথা একাদশ রমজানে সে যেই মসজিদে নামাজ পড়বে, সেখানে নিয়মমতো ১৪ নম্বর পারা তেলাওয়াত করা হবে। রমজানে তারাবিতে পারা ভাগ করে কোরআন খতমের এই যে বাহ্যত সুন্দর পদ্ধতি, এটি কি বাস্তবেই সুন্দর নাকি এর চেয়ে আরও উত্তম কোনো পদ্ধতি আছে? কোরআনকে ত্রিশ পারায় ভাগ করার উদ্দেশ্যসহ আরও একটি বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করলে ব্যাপারটি বুঝে আসবে।
কোরআনকে ত্রিশ পারায় ভাগ করার উদ্দেশ্য
পারা শব্দটি ফার্সি; যার অর্থ—টুকরো, অংশ। বর্তমানে আমাদের সামনে পবিত্র কোরআনুল কারিমের যে প্রতিলিপি রয়েছে, তা মোট ত্রিশটি অংশে বা পারায় বিন্যস্ত। পারার এ বিন্যাস অর্থ হিসেবে নয়; বরং হিফজের ছোট বাচ্চাদের পড়া এবং পড়ানোর সুবিধার্থে। হাফেজি কোরআনুল কারিমের প্রতিটি পারায় ২০টি পৃষ্ঠা থাকে। পৃষ্ঠার এ বিন্যাসও বাচ্চাদের দিকে খেয়াল করেই সাজানো।
এক কথায়—পারা এবং পৃষ্ঠা অর্থ বা বিষয়ের প্রতি নজর রেখে বিন্যস্ত হয়নি। তাই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একটি পৃষ্ঠা বা পারা শেষ হয়েছে, কিন্তু বিষয়বস্তু অপূর্ণ রয়ে গেছে। পারা ও পৃষ্ঠার এ বিন্যাস কে করেছেন, এর নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র পাওয়া যায় না। তবে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তার অমর গ্রন্থ মাজমাউল ফাতাওয়াল কোবরায় উল্লেখ করেছেন, হরকত তথা জবর-জের-পেশ এর মতো পবিত্র কোরআনে পারারও প্রবর্তন করেছেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।