সবাই উদগ্রীব এখন জাতীয় বাজেটের জন্য। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে আমজনতার জীবন ও জীবিকার বাজেট জাতীয় বাজেটের থেকে আলাদা কিছু কিনা। মিডিয়ায় প্রশ্নটা বরাবরের মতো আরও স্পষ্ট হচ্ছে যে, সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ’ সেই আপামর জনগণ অর্থাৎ আমজনতার আশা-অকাক্সক্ষা, চাওয়া-পাওয়া, দাবি-দাওয়া বাজেটে প্রতিফলিত হবে কিনা। এ প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক যে, জাতীয় বাজেটের মধ্যে করোনা মোকাবিলার মতো, করোনায় বিধ্বস্ত ও কিয়েভ-ক্রেমলিন যুদ্ধের দ্বারা আহত অর্থনীতি, গণস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা পুনরুদ্ধারের মতো জরুরি বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে কিনা, প্রশ্ন এ কারণেও উঠতে পারে যে, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ প্রকৃত প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় খাতে (এ মুহূর্তে যেমন জীবন ও জীবিকা) যথাযথ (ব্যয় সাশ্রয়ী, অর্থায়ন আয় বৃদ্ধি ও কৃচ্ছ্রসাধন অর্থে ব্যয় সংকোচন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি-বেসরকারি খাত দল-মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে সংকট মোকাবিলায়) ব্যবহৃত হচ্ছে কিনা, নতুন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য সবাই পরামর্শ দেন, সুপারিশ করেন, দাবি তোলেন কিন্তু সেই বরাদ্দের বিপরীতে অর্থায়ন ও লক্ষ্যভেদী বাস্তবায়নের পরিস্থিতি, সেই ব্যয়ের তাৎক্ষণিক, স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি ইমপ্যাক্ট ও অভিঘাত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার অবকাশ বরাবরই হালে পানি পায় না।
সাধারণ সময়ে সেই অবকাশ কমবেশি দেরিতে মিললেও করোনা মোকাবিলার মতো জরুরি সময়ে বরাদ্দ ব্যবহার এবং কর্মপরিকল্পনা প্রয়োগও জরুরি এ কারণে যে, ’রোগী মারা যাবার পর চিকিৎসকের উপস্থিতির’ মতো পরিস্থিতির যেন উদ্ভব না হয়। এটি এজন্যও বিবেচিত যে, সবাই নতুন বাজেট আসার বা আনার সময় আলোচনা-পর্যালোচনা এমনকি মৃদুমন্দ সমালোচনা করেন কিন্তু বাজেট পাস হওয়ার পর সারা বছর সেই বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে, তাৎক্ষণিক করণীয় নিয়ে কোনো কথা তো হয়ই না, বরং বিনা বাক্য ব্যয়ে সম্পূরক বাজেটে সারা বছরের অপব্যয়, অপচয়, অতিরিক্ত ব্যয়, আয়ে অপারগতা, ব্যয়ে বাড়াবাড়ি, তছরুপ-দুর্নীতি সবই গৃহীত হয়ে যায়।