২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে দুর্ঘটনায় দুই কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর সহপাঠীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে যে আন্দোলন করেছিলেন, সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী মাইশা মমতাজের জীবন কেড়ে নিল আরেক সড়ক দুর্ঘটনা। গত শুক্রবার সকালে উত্তরা থেকে তিনি নিজের স্কুটিতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় খিলক্ষেত উড়ালসড়কে একটি কাভার্ড ভ্যান তাঁকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইশা গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাইশা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন। শুক্রবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় যে সাতজন নিহত হয়েছে, তার চারজনই শিক্ষার্থী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ট্রাকের চাপায় ফরিদপুরে মারা যায় ১৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছে, তার ১১ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী। এ সময় প্রতিবছর গড়ে ৮০০ শিক্ষার্থী মারা গেছে।
সাম্প্রতিক কালের দুর্ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, শিক্ষার্থী মৃত্যুর হার আরও বেড়েছে। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সড়কে ১ হাজার ১২ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ১৩০টি শিশু, যাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল দেড় বছরের বেশি সময়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও সপ্তাহে এক বা দুই দিন ক্লাস হতো। গত মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে গেছে। সব শিক্ষার্থী নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের ঘরের বাইরে যাওয়াও বেড়েছে।
এই যে একের পর এক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে, এর জন্য দায়ী কে? সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কী করছেন? সরকারি হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, সড়কে যত যানবাহন নামছে, তার একটি বড় অংশের লাইসেন্স নেই। কেন লাইসেন্স নেই? গাড়ির মালিক ও চালকদের অভিযোগ, তাঁরা মাসের পর মাস ধরনা দিয়েও বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স পাচ্ছেন না। এ কারণে লাইসেন্স ছাড়া কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দিয়ে যানবাহন চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকে হালকা যানবাহনের লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালাচ্ছেন।