ক্রিস্টোফার কলম্বাস তখন সবে আমেরিকা আবিষ্কার করে (এবং আমেরিকান আদিবাসীদের বারোটা বাজিয়ে) স্পেনে ফিরেছেন (তিনি ইতালির লোক হলেও, আমেরিকা আবিষ্কার করেন স্পেনের অর্থায়নে)। চারিদিকে তাঁর জয়-জয়কার। কিন্তু স্প্যানিস সমাজের উপরতলার একশ্রেণির হিংসুটে মানুষের সহ্য হচ্ছিল না। কলম্বাসের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজের টেবিলেই তাদের সেই হিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো।
খাবার টেবিলে একজন বলে বসলেন: ‘মিস্টার ক্রিস্টোফার, আপনি যদি আমেরিকা আবিষ্কার না-ও করতেন, আমাদের মহান স্পেনের কোনো-না-কোনো মহান ব্যক্তি তা ঠিকই আবিষ্কার করতেন; এটা আসলে কোনো কঠিন কাজ নয়।‘ কলম্বাস উত্তরে কিছু বললেন না, শুধু একটি কাঁচা ডিম চেয়ে আনালেন। ডিম দেখে উপস্থিত উপরতলার লোকজন তো অবাক! ডিম দিয়ে কী হবে? কলম্বাস কী করতে চান? কলম্বাস বললেন: ‘উপস্থিত সুধী, আপনারা কি ডিমটি এই মসৃণ টেবিলের উপর অন্য কোনোকিছুর সাহায্য না-নিয়ে দাঁড় করাতে পারবেন?’ প্রশ্ন শুনে একজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন, বললেন: ‘এ আর এমন কী কাজ! আমাকে দিন, আমি করে দেখাচ্ছি।’
ডিমটি তাঁর কাছে পৌঁছানো হলো। তিনি অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ডিমটি দাঁড় করাতে পারলেন না। তারপর একে একে উপস্থিত সবাই চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। তাদের সবার হাত ঘুরে শেষ পর্যন্ত ডিম এলো কলম্বাসের হাতে। অট্টহাসিতে ফেটে পড়া ভদ্রলোকের মুখে তখন মৃদু হাসিও নেই। তিনি অনেকটা চ্যালেঞ্জের সুরে বললেন: ‘খুব তো মজা নিলেন, আপনি পারবেন ডিম দাঁড় করাতে?’ কলম্বাস বললেন: ‘পারব।’ বলেই তিনি ডিমটি লম্বালম্বিভাবে ধরলেন এবং শক্ত টেবিলে আলতো করে ঠুকে দিলেন। এতে ডিমের একটি মাথা সামান্য থ্যাতলে গেল। কলম্বাস তখন দিব্যি ডিমটি মসৃণ টেবিলে বসিয়ে দিলেন।
গোটা কক্ষজুড়ে তখন গুঞ্জন শুরু হলো। একজন বললেন: ‘এ তো দেখছি খুবই সহজ কাজ!’ কলম্বাস বললেন: ‘এতোক্ষণ আপনারা সবাই কাজটা করার চেষ্টা করেছেন এবং ব্যর্থ হয়েছেন। যখন আপনারা একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছিলেন, তখন কাজটাকে কি আপনাদের কাছে কঠিন বা অসম্ভব মনে হয়নি? আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ আপনাদের মাথায় আইডিয়া ছিল না; কীভাবে কাজটা করা যায়, সে-কৌশল আপনাদের জানা ছিল না। আমার মাথায় আইডিয়া ছিল, আমি কৌশল আবিষ্কার করেছি। এখন আপনাদের কাছে কাজটা সহজ মনে হচ্ছে।’ উপস্থিত সবাই তখন বুঝতে পারলেন, কলম্বাস কী বলতে চান। যারা, তাকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করছিলেন, তাদের মাথা নত হলো।