'ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা'- এমন উদ্দীপক স্লোগানে ২০১০ সালে সংস্থাটি নিয়েছিল নয়া এক কর্মসূচি, লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা ৭০ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা। উৎপাদিত ৩০ শতাংশ পানির জোগান আসার কথা ছিল গভীর নলকূপ থেকে। বাকি ৭০ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ উৎসের পানি (সারফেস ওয়াটার) শোধন করে সরবরাহের ওয়াদা করা হয়েছিল। দীর্ঘ ১২ বছরেও তারা কথা রাখতে পারেনি। ঢাকা ওয়াসা হাঁটছে উল্টো পথেই। একের পর এক গভীর নলকূপ বসিয়ে বাড়িয়েছে ভূগর্ভস্থ থেকে পানির উৎপাদন। ফলে রাজধানীর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর তিন মিটার করে নিচে নামছে। এতে ভূগর্ভে তৈরি হচ্ছে বিশাল শূন্যতা। এ কারণে আকস্মিক দেবে যেতে পারে ঢাকা নগর। অসংখ্য বহুতল ভবন ও জনবহুল হওয়ায় ঢাকা নগরের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি মারাত্মক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা ওয়াসার ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির ৭১ শতাংশ আসছে গভীর নলকূপ থেকে। বাকি ২৯ শতাংশ আসছে ভূ-উপরিস্থ থেকে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা আলী বলেন, গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি তোলার ফলে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে ভূগর্ভে শূন্যস্থান তৈরি হয়। তখন পরিবেশের জন্য দুটি ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি হয়। একটি ভূমিকম্প, অন্যটি ভূমিধস। এই পরিস্থিতি হলে ঢাকায় কী অবস্থা তৈরি হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।
ঢাকা ওয়াসার বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিবছরই রাজধানীতে গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ছে। ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপ ছিল ৫১৯টি। ২০২১ সালের জুনে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩৪টিতে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন বাসা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে আরও দুই শতাধিক গভীর নলকূপ। এসব ব্যক্তিগত গভীর নলকূপ থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৯ কোটি লিটার পানি তোলা হচ্ছে।