ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে রোজ রাশিয়ার ট্যাঁক থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি ডলার। আর প্রতি রাতে খালি পেটে ঘুমাতে যায় বিশ্বের ৮২ কোটি মানুষ (করোনা মহামারি হানা দেওয়ার আগে সংখ্যাটি ১৬ কোটির কম ছিল)। এ দুটি তথ্যের তুলনা তেল ও পানিকে একত্র করার শামিল মনে হতে পারে। কেননা, তেল ও পানি উভয়ই তরল হওয়া সত্ত্বেও যেমন একে অপরের সঙ্গে যেমন মেশে না, তেমনি রাজার খায়েশ পূরণ আর প্রজার পটল তোলা তো এক জিনিস নয়। তবে দুটি দুই ক্ষেত্রই আসলে মানুষ মারার ইন্তেজাম। প্রথমটিতে গুলিগোলা-বোমাবারুদে, তাড়াতাড়ি; দ্বিতীয়টিতে বঞ্চনায়, পরোক্ষে, ধীরে ধীরে।
যুদ্ধের মাধ্যমে ‘মহৎ’ উদ্দেশ্য সাধনের ক্ষেত্রে উলুখাগড়ার প্রাণ যাওয়া স্বাভাবিক, জর্জ বুশ যাকে মিঠা হাসি হেসে বলেছিলেন ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’। আর যুদ্ধ বাধানোর মতো যে ব্যবস্থা বিশ্বে বলবৎ, তারই ‘কোল্যাটারাল ড্যামেজ’ গরিবকে আরও গরিবিতে ঠেলে দেওয়া, অলিগার্কদের ফুলেফেঁপে ওঠা। তাই ইউক্রেন যুদ্ধের এক দিনের খরচে কত মানুষের সারা জীবনের পেটের চিন্তা দূর হবে, তার তুলনা টানা ‘অর্থই প্রথম’ এই বিশ্বে অর্থহীন। যুগের পর যুগের গরিব মারায় জারি থাকা বন্দোবস্তের গোড়ায় হাত না দিলে পরিস্থিতির ইতরবিশেষ হবে না।
আফগানিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ গাঁটের কড়ি ঠেলেছে, মাথাপিছু হিসাবে প্রত্যেক আফগান নাগরিকের পেছনে তা ৫০ হাজার ডলার ব্যয়ের সমান। আফগানিস্তানের জনসংখ্যা প্রায় চার কোটি। দুই দশক স্থায়ী আফগান যুদ্ধে আড়াই হাজার সেনাসহ প্রাণ গেছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার মার্কিন নাগরিকের। ৬৯ হাজার আফগান সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। বেঘোরে মরেছেন ৪৭ হাজার বেসামরিক আফগান নাগরিক। বিপক্ষ বাহিনীর প্রাণহানির সংখ্যা ৫১ হাজার।
২ দশমিক ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার ঢেলে এত মানুষের মৃত্যুর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কী পেয়েছে? প্রশ্নটা যতটা সরল, উত্তর ততটাই ‘জটিল’। ইউক্রেন যুদ্ধেরও কারণ তাই এককথায় বিবৃত হওয়ার নয়, এর উদ্দেশ্যও বহুমুখী। কিন্তু সব যুদ্ধের ক্ষেত্রেই যেটা সত্য, সেটা হলো ‘মৃত্যু’। প্রথম মৃত্যু ঘটে সত্যের; দ্বিতীয়ত তাঁদের, যুদ্ধের সঙ্গে যাঁদের দূরদূরান্তের সম্পর্কও থাকে না—উলুখাগড়া, মানে সাধারণ মানুষ। এরপরও একটা কথা থাকে। মানবিক মর্যাদায় সব মানুষ সমান বলে যে ‘সত্য’ প্রচারিত, তা যুদ্ধের সময়, আগে বা পরে— সব সময়ই ‘মৃত’।