‘একদিকে অতীতের অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটাইতে হইতেছে, অপরদিকে আমরা আগামী দিনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হইতেছি। আজিকার দিনে বিশ্বের জাতিসমূহ কোন পথ বাছিয়া নিবে, তাহা লইয়া সংকটে পড়িয়াছে। এই পথ বাছিয়া নেওয়ার বিবেচনার উপর নির্ভর করিতে আমরা সামগ্রিক ধ্বংসের ভীতি এবং আণবিক যুদ্ধের হুমকি নিয়া এবং ক্ষুধা, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে মানবিক দুর্গতিকে বিপুলভাবে বাড়াইয়া তুলিয়া আগাইয়া যাইব অথবা আমরা এমন এক বিশ্ব গড়িয়া তোলার পথে আগাইয়া যাইব—যে বিশ্বে মানুষের সৃজনশীলতা এবং আমাদের সময়ের বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতি আণবিক যুদ্ধের হুমকিমুক্ত উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের রূপায়ণ সম্ভব করিয়া তুলিবে।
আমরা এই ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন যে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট শুধুমাত্র শান্তি এবং আন্তর্জাতিক সমঝোতার পরিবেশেই সমাধান করা সম্ভব। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, বর্তমান অস্ত্র প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ করার জরুরি ব্যবস্থা নিতে হইবে। ইহাতে শুধুমাত্র এই ধরনের পরিবেশই সৃষ্টি হইবে না, ইহাতে অস্ত্রসজ্জার জন্য যে বিপুল সম্পদ অপচয় হইতেছে, তাহাও মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত করা যাইবে।’
এটি আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের দেওয়া ভাষণ। সেই রাষ্ট্রপ্রধানের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ব মানচিত্রে নবীন একটি রাষ্ট্রের প্রধান প্রথমবারের মতো জাতিসংঘে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন। স্বাভাবিক বিবেচনা কী বলে, বঙ্গবন্ধু ইংরেজিতে ভাষণ দেবেন, বিশ্বের কাছে নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরবেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের জন্য সবার সহানুভূতি চাইবেন, সাহায্য-সহযোগিতা চাইবেন। কিন্তু প্রথম ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বুঝিয়ে দিলেন তিনি শুধু বাংলাদেশের নেতা নন। তিনি বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের নেতা, তিনি শুধু নির্দিষ্ট সময় বা কালের নয়; তিনি সর্বকালের। আজ যখন বিশ্ব যুদ্ধ কবলিত, তখনও ৪৮ বছর আগে দেওয়া একজন নেতার ভাষণ কী ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। কতটা দূরদর্শিতা থাকলে একজন নেতা জাতিসংঘে তাঁর প্রথম ভাষণেই গোটা বিশ্বকেই এমন মানবিক দিক নির্দেশনা দিতে পারেন!
বাংলাদেশ আজ এক সমীহ জাগানিয়া শক্তি। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের এক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬০০ ডলার, গড়ে যা ভারতের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছর। সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচি, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষাজাগানিয়া।