আমাদের উদ্ভট শিক্ষাপদ্ধতির বদৌলতে ছেলেবেলায় বেশ কটি রচনা মুখস্থ করতে হয়েছে। যেমন পাট, গরু, নৌকাভ্রমণ, বেকার সমস্যা, জীবনের লক্ষ্য ও জনসংখ্যা সমস্যা। এগুলোর কোনোটিই কাজে আসেনি। পাটশিল্প ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পের মতো বিলুপ্তপ্রায়। গরু আর লাঙল টানে না। নদীগুলো সব দূষিত কিংবা ভূমিদস্যুদের কবলে। নৌকাভ্রমণ আর চলে না। রচনা পড়ে চিকিৎসক হওয়া ছাড়া জীবনের আর কোনো লক্ষ্য থাকতে পারে বলে মনে হয়নি। নচিকেতার ‘ডাক্তার’ গান শুনে সে লক্ষ্যও এখন পানসে। জনবিস্ফোরণ, এখন যা বিস্ফোরণে রূপান্তরিত হয়ে ট্রাফিক জ্যামে জান বের করে দিচ্ছে। বটবৃক্ষের মতো টিকে আছে একটিই রচনা—বেকার সমস্যা। সরকার ঘোষণা না দিলেও এটি এখন নিঃসন্দেহে এক নম্বর সমস্যা—বাংলাদেশের সর্বাধিক জটিল সমস্যা।
বেকারত্বের পার্শ্বরোগ নিয়ে সরকারের মাথাব্যথা যথেষ্ট। এগুলোর নাম মাদক, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, সামাজিক বিকৃতি, ধর্ষণ, খুন, আত্মহত্যা, চেলাবৃত্তি, চাঁদাবাজি, বালুচুরি, পর্নোগ্রাফি ও স্থানীয় মস্তানি। গত বছর এগুলোর মাত্রা রেকর্ড স্থাপন করেছে। বেকারত্ব এই প্রতিটি পার্শ্বব্যাধির বড় কারণ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল করোনার অসিলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাসের পর মাস বন্ধ করে রাখা, সেটাও রীতিমতো বিশ্বরেকর্ড পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। বেকারত্ব প্রশমনে হাত না দিলে এর পার্শ্ব–রোগবালাই কমবে না। এটা সমাজতত্ত্বের কথা এবং অর্থনীতি সমাজবিজ্ঞানের বাসিন্দা।