ভেবেছিলাম শিরোনামের শেষটায় লিখব ‘সাধারণ মানুষ জিম্মি’। কিন্তু পরে অনুধাবন করলাম বাস্তবতাটি ভিন্ন। সাধারণ মানুষকে রক্ষা করবে যে সরকার সেই সরকারই তো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। সড়ক ও বাজার নিয়ন্ত্রণযানের ড্রাইভিং সিট থেকে সরকারকে সরিয়ে দিয়ে এসব অঞ্চলের শক্তিমানরা আসন দখল করে সরকারকে জিম্মি করেছে। অনেকটা লর্ড ক্লাইভের দ্বৈত শাসনের মতো। প্রশাসন পরিচালনার দায় সরকারের রইল ঠিকই কিন্তু সব চর্ব-চোষ্য-লেহ্য আকণ্ঠ পান করতে থাকলেন এসব অঞ্চলের ক্ষমতাবানরা। এরা পর্দার অন্তরালে সুখনিদ্রা দিলেন আর সমালোচিত হতে থাকল সরকার।
সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষুব্ধতা ছড়িয়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে সরকারের কাছের কোনো পক্ষ কী গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? না হলে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে চাল, তেল থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের দাম ঝড়ের গতিতে বেড়ে যাচ্ছে কেন! অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হচ্ছে গ্যাস আর পানির মূল্য। সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা এখন রেকর্ড ছাড়াতে যাচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণে সম্মুখযোদ্ধা হিসাবে এগিয়ে না এসে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে যেন অসহায় দৃষ্টিতে সব দেখছেন। এ অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই বলতে হচ্ছে যানবাহনে দক্ষ চালক নিয়োগের কথা। এমন একটি জিম্মি দশার অবস্থা দেখে গভীর হতাশায় ডুবছে এদেশের সাধারণ মানুষ।
সরকারের হাতে যে সড়ক নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নেই সেই সত্য তো বহু আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। জনগণের মাথায় হাজারটা কাঁঠাল ভেঙে হলেও যানবাহনের শ্রমিক মালিকদের স্বেচ্ছাচার মানতে হয় সরকারকে। আর এরাও সরকারের দুর্বল জায়গাটি চিনে ফেলেছে। একে তো এ অঞ্চলে আমাদের তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর ভোট ব্যাংক রয়েছে, অন্যদিকে গণবিরোধী হলেও এদের সংঘবদ্ধ শক্তির দাবির মুখে সরকার পক্ষ বরাবরই নমনীয় থাকছে। সরকারি মন্ত্রী এমপিরা শ্রমিক সংগঠনের আর মালিক সমিতির নেতা হওয়ার সুবাদে নিজ নিজ স্বার্থ ঠিক রাখতে গণঅধিকারকে বারবার ভূলুণ্ঠিত করেছে।