আমি যখন স্কুলে পড়ি, তখন আমাদের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন, যাঁকে আমরা যমের মতো ভয় পেতাম। নাম সিদ্ধেশ্বর হালদার। ভীষণ রাগী কিন্তু বিদ্বান ও পণ্ডিত ছিলেন। তিনি আমাদের অঙ্কের ক্লাস নিতেন। ক্লাসে মনোযোগী না হলে প্রচণ্ড রেগে যেতেন। স্যারের অঙ্কের পাণ্ডিত্য দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। তাঁর একটি বিশেষ গুণ ছিল। সমাজে নিজেদের ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য তিনি প্রতিদিন অঙ্ক করানো শেষে একটি করে উপদেশ দিতেন। তখন দশম শ্রেণিতে পড়ি। কদিন বাদেই এসএসসির টেস্ট পরীক্ষা।
সিদ্ধেশ্বর স্যারের শেষ ক্লাস। তিনি সবার উদ্দেশে বললেন, ‘তোদের সঙ্গে আজই আমার শেষ ক্লাস। তোরা স্কুলজীবন শেষ করে কলেজে যাবি, তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে নতুন নতুন পেশায় জড়িয়ে পড়বি। একটা কথা মনে রাখিস, নিজ থেকে কেউ কাউকে সম্মান দেয় না। নিজের কাজ ও ভালো আচার-আচরণের বিনিময়ে সম্মান অর্জন করতে হয়। আত্মমর্যাদাশীল ব্যক্তিরাই সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকেন। যিনি নিজেকে সম্মান করতে জানেন না, তিনি অন্যের সম্মানও আশা করতে পারেন না। একজন মানুষের আত্মসম্মানবোধ বড় অমূল্য সম্পদ। এই আত্মসম্মান সারা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে তৈরি হয়। অভিজ্ঞতা যদি ভালো হয়, তাহলে উচ্চ আত্মসম্মানবোধ তৈরি হবে। আর যদি নেতিবাচক হয়, তাহলে তার বিপরীত হবে।’