তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। কেন হারিয়েছেন, তার বিশদ বিবরণ দেওয়ার আর বেশি প্রয়োজন নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমসমূহে ডা. মুরাদ হাসানের অপকীর্তি ব্যাপক প্রচার ও ভাইরাল হয়েছে। মুরাদ হাসান রুচিবোধ, সৌজন্যতাবোধ, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নেওয়া শপথের অঙ্গীকার এবং স্বাভাবিক শিষ্টাচার চরমভাবে ভঙ্গ করেছেন। একজন উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আচরণ, চিন্তার মান ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা কিংবা পাত্তা না দেওয়ার বিষয়টি যেকোনো সাধারণ মানের একজন মানুষের কাছেও বেশ হতবাক হওয়ার মতো মনে হতে পারে। অথচ মুরাদ হাসান সেটিও পাত্তা দেননি। তিনি একজন প্রতিমন্ত্রী, এটিও ভুলে গেছেন। ঔদ্ধত্য ও সীমালঙ্ঘন সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নিজের মধ্যে ছিল না। সে কারণে তিনি একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর এসব ঘটনা ও কথাবার্তা ভাইরাল হতে পারে, বড় ধরনের সমালোচনার জন্ম দিতে পারে, সেই বোধও মনে হয় তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এটি যদি কোনো কম শিক্ষিত মানুষের দ্বারা সংঘটিত হতো, তাহলে একধরনের প্রবোধ দেওয়া যেত। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত একজন ডাক্তার, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা থেকে প্রতিমন্ত্রীর পদে উত্তরণের পথ অতিক্রম করা মানুষ কীভাবে নিজেকে এতটা কুরুচিপূর্ণ মানুষের জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছে, সেটি ভাবতেও বেশ অবাক হতে হয়। সাধারণত মেধাবী ছেলেমেয়েরাই তো ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান। তিনিও নিশ্চয়ই মেধাগুণে ডাক্তার হয়েছিলেন। রাজনীতিতেও তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পদ-পদবি পেয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পিতাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। তবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াকালে তিনি ছাত্রদলে যোগ দিলেন, পদ-পদবিও লাভ করেছিলেন। সেখান থেকে ছাত্রলীগে যোগদান এবং সভাপতির পদ অলংকৃত করার পর তাঁর রাজনীতির বাঁক পরিবর্তন হলো। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে, পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ‘বদলি’ হলেন। এখন জানা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়েছিল। নীতিনির্ধারকেরা যদি তখনই তাঁর কর্মের অগ্রপশ্চাৎ ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, তাহলে ডা. মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত এমন আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটার কিংবা প্রচার হওয়ার সুযোগ পেত না। ডা. মুরাদ হাসান নৈতিক স্খলনের যেসব ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেগুলোও হয়তো ঘটানোর সাহস পেতেন না, যদি তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদে আসীন না থাকতেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনি যদি কিছু ঘটিয়েও থাকতেন, তাহলে সেটির প্রচার ও দায় সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর এভাবে বর্তাত না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বসে তিনি পদের মর্যাদাবোধ সম্পর্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। সে কারণে তিনি একের পর এক কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, যেগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার, সীমালঙ্ঘন এবং নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ হিসেবে দুনিয়াজোড়া বিবেচিত।