বাংলাদেশ আমার অগ্রজ। আমার তিন বছর আগে তাঁর জন্ম। আমার বেড়ে ওঠা তাঁর হাত ধরে। এখনও ধরে আছি। বাংলাদেশ কী করে জন্ম নিলো, সেই জন্ম প্রক্রিয়ার গল্প কানে আসতে শুরু করে, বলা ভালো বুঝতে শুরু করি স্কুলে যাওয়ার কিছু আগে থেকে। পরিবারে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া মানুষ যেমন ছিল, তেমনই সেই সময়ে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত মানুষও ছিলেন। তাদের মুখ থেকে শোনা হতো যুদ্ধ দিনের আখ্যান। কোনও কোনও ঘটনার বর্ণনা শুনে সেই বয়সেও শিহরিত হয়েছে। আমার ছোট চাচার মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি খেকে পালিয়ে যাওয়ার কাহিনি যেমন এক প্রকার আন্দোলিত করতো তখনকার কিশোর মন, তেমনই পুলিশ কর্মকর্তা আরেক চাচার সৈয়দপুরের অবাঙালিদের হাতে নৃশংশ ভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনা এখনও বিমর্ষ করে।
ছেলেবেলায় তাঁর শহীদ হওয়ার কাহিনি আমার মন বাড়িতে যে আঘাত করেছিল, তা এখনও প্রতিধ্বনিত হয়। শৈশবের বেড়ে ওঠা কলোনিতে। সেখানে প্রায়ই প্রতিবেশীদের আড্ডায় মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো উঠে আসতো। কে, কোথায়, কীভাবে শহর ছেড়ে পালিয়েছিলেন, আশ্রয় নিয়েছিলেন কোথায়, পাক হানাদার বাহিনী থেকে প্রাণে রক্ষা পাওয়া এবং মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার গল্পও শুনেছি। এ ধরনের আলাপে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধের সময়কে ‘গন্ডগোল’ বা ‘গন্ডগোলের বছর’ও বলতেন। যতবার ‘গন্ডগোল’ শব্দটি উচ্চারিত হতো, ততবার আমার মা প্রতিবাদ করে বলতেন, একাত্তরে গন্ডগোল হয়নি। যুদ্ধ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ।