১২৭ রান! এই সংখ্যা প্রকাশ করে বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্যতা। কেউ কেউ বলবে এই রান নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের আশা? যারা কিনা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা পাঁচ জয় নিয়ে খেলেছে সেমিফাইনাল। যে দলে আছে বাবর আজম, রিজওয়ানের মতো দুর্দান্ত ওপেনার। ফকর জামান, হায়দার আলী, শোয়েব মালিকরা যে দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। তাদের এত স্বল্প পুঁজি নিয়ে হারানো এত সহজ যে নয়- তাতো অনুমেয়। তবুও টাইগার বোলাররা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করতে চলেছিলেন। ১২৮ রানের লক্ষ্যে পাকিস্তান হারিয়েছিল ৪ উইকেট। ৬১৮ দিন পর দর্শকরা মাঠে ফিরে দেখতে চলেছিল হারের শিকল ভাঙার দিন। কিন্তু হলো না, শেষ ৩ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩২ রান। কিন্তু দারুণ বল করা মোস্তাফিজুর রহমান ও শরীফুল ইসলাম দুই বাঁহাতি পেসারই দেন ১৫ রান করে। শেষ ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলে আমিনুল ইসলাম হজম করেন ছক্কা। মাত্র ১৫ বলে ৩৬ রানের জুটিতে গড়ে শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজ ৪ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন। তাহলে হারের জন্য বোলাররা দায়ী! আসলে ভুলটা কোথায়? আগে জেনে নেয়া যাক হারের পর টাইগার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ কি ব্যাখ্যা দিলেন। তিনি আসলে কোনো ভুল খুঁজে পাননি। বরং পাকিস্তান ভালো করেছে বলেই জয় সম্ভব হয়নি- এটাই তার মতামত। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘আজকে ওরা (পাকিস্তান) ভালো ব্যাটিং করেছে শেষের দিকে। এ কারণে হয়তো বা হয়নি।’ তার এমন বক্তব্যেই স্পষ্ট তিনি নিজেও জানেন না ভুলটা কোথায়!বিশ্বকাপে ব্যর্থ লিটন দাস, সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহীমকে বাদ দিয়ে সাজানো হয়েছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে স্কোয়াড। সাকিব আল হাসান ইনজুরির কারণে দলে নেই। খেলার কথা থাকলেও ফের চোটে পড়ায় খেলতে পারেননি তামিম ইকবাল। তাই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বলতে অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহই। তারপর আছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ ও নূরুল হাসান সোহান। বাকিরা একেবারেই তরুণ। বলতে গেলে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন বাংলাদেশই মাঠে নেমেছিল। কিন্তু নামার আগেই সাইফ হাসানের টি-টোয়েন্টি অভিষেক নিয়ে উঠে প্রশ্ন। টেস্ট দলে যে কিনা সুযোগ পেয়েও নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। যাকে টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবেই চিন্তা করা হয়। তাহলে মুমিনুল হক সৌরভ, সাদমান ইসলাম অনিক, এমনকি মোহাম্মদ মিঠুনের কি দোষ! নাজমুল হোসেন শান্তকে অনেক সুযোগ দিয়েও ফলাফল শূন্য। সাইফ ৮ বলে ১ আর শান্ত ১৪ বলে ৭ রান করে আউট হন। অন্যদিকে নাঈম শেখের বাজে দিন বলে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে। বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো এই তরুণ গতকাল ৩ বলে ১ রান করে আউট হন। ১৫ রানে দলের তিন উইকেটের পতন। এরপর আফিফ ৩৬, নূরুল ২৮ ও মেহেদী হাসানের ৩০ রানে মান বাঁচে দলের। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে তাদের নিয়েও। উইকেটে থিতু হয়ে তারা যেভাবে আউট হয়েছেন সেটিও কি ভুল বা অপরাধ নয়! এই হারের পিছনে প্রথম ভুলের নাম টাইগারদের খেই হারানো ব্যাটিং! তার জন্য নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের দায়টা কি কম! তরুণদে নিয়ে তাদেন মিশনের প্রথম ম্যাচেই ব্যর্থ। বাকি দুই ম্যাচে কী হয় সেটি দেখেই বোঝা যাবে বাংলাদেশের ভাগ্য কোন্ পথে যাচ্ছে। আর লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিল্পব হয়ে রইলেন তামাশার নাম। কেন তাকে একাদশে জায়গা দেয়া হয়েছে সেটিই বোঝা দায়! ১৬.৫তম ওভারে যখন নুরুল হাসান সোহান আউট হন তখন ব্যাট হাতে মাঠে নামানো হয় বিল্পবকে। ৫ বল খেলে ২ রান করে আউট হন তিনি। এরপর ব্যাটিংয়ে আসেন পরীক্ষিত খেলোয়াড় তাসকিন। তার শেষ বলে ছক্কা দলকে এগিয়ে নিয়েছিল কিছুটা। এখানে প্রশ্ন মেহেদী যখন লড়াই করছিল তখন তাসকিনকে কেন পাঠানো হলো না! এখানে শেষ নয়, যে বোলিং বৈচিত্র বাড়াতে লেগ স্পিনার নেয়া হলো তিনিই করতে পারলেন মাত্র ২টি বল! তাও কি শেষ ওভারে যখন পাকিস্তানের জয়ে জন্য প্রয়োজন ৬ বলে ২ রান। বিল্পবের প্রথম বলে রান না এলেও দ্বিতীয়টি হাঁকালেন ৬। কেন তাকে বল দেয়া হলো না তারও একটি খেয়ালি ব্যাখা দিয়েছেন অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা ছিল বোলিং করানোর (বিল্পব)। পরে যেহেতু দুটি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিল, তাই আমাকে বোলিং করতে হয়।’অন্যদিকে দিনে দারুণ বোলিংয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বল হাতে বিশ্বকাপ ভালো কাটেনি মোস্তাফিজুর রহমানের। দেশের মাটিতে ফিরে জ্বলে উঠেন এই পেসার। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ রিজওয়ানকে। ১১ বলে এক চারে ১১ রান করেন রিজওয়ান। সেই ধাক্কায় প্রথম ৩ ওভারে পাকিস্তানের সংগ্রহ ১ উইকেট হারিয়ে ১৬ রান। তখনো ক্রিজে পাক অধিনায়ক বাবর আজমের সঙ্গী ফখর জামান। কিন্তু দলের স্কোর বোর্ডে আর মাত্র ৬ রান যোগ হতেই অধিনায়ক বাবর আজম তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ৭ রানেই ফিরে যান সাজঘরে। সদস্য সমাপ্ত টি-টোয়েন্টি আউট বিশ্বকাপ কাঁপানো দুই ওপেনার আউট হতেই আশায় বুক বাঁধে বাংলাদেশ। মাঠে আসা দর্শকরা সমগ্র শক্তি দিয়ে চিৎকারে চিৎকারে দলকে সমর্থন দিতে শুরু করে। ব্যাকগ্রাউন্ডে জেগে ওঠো বাংলাদেশ গানটা যেন মাঠে ছড়িয়ে দেয় অন্য এক উত্তেজনা। সেই জোয়ারে ভেসে মেহেদী হাসানের বলে উইকেট দিয়ে শূন্য হাতেই সাজঘরে ফেরেন হায়দার আলী। এরপর অভিজ্ঞ শোয়েব মালিককে দুর্দান্ত এক থ্রোতে রানআউট করে বিদায় করেন কিপার নূরুল হাসান সোহান। তিনিও ফেরেন শূন্য হাতে। মাত্র ৫.৬ ওভারে ২৪ রান তুলতেই নেই পাকিস্তানের ৪ উইকেট। তবে পাকিস্তান বলে কথা! তারা জানে একবার দাঁড়িয়ে গেলেই স্বল্প পুঁজি তাড়া করা সম্ভব। তাই ফকর জামান ধৈর্য ধরে লড়াই চালিয়ে যান ৩৬ বলে ৩৪ রান করে দলকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। তিনি যখন আউট হন তখন দলের স্কোর বোর্ডে ৮০ রান। তাসকিন ফখরকে কট বিহাইন্ড করেন। ভাঙলেন জমে যাওয়া ৫৬ রানের জুটি। ৩৬ বলে চারটি চারে ৩৪ রান করেন ফখর। তখনও খুশদিল পাকিস্তানের ভরসা। কিন্তু দলের ৯৬ রানের সময় তিনিও ৩৪ রানে শরীফুলের শিকার হন। কিন্তু ততক্ষণে পাকিস্তান ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। শেষদিকে শাদাবের ব্যাট থেকে আসে করেন ১০ বলে ২১, নওয়াজ করেন ৮ বলে ১৮। দুই জনেরই ইনিংসে দুই ছক্কার পাশে একটি চার। মোস্তাফিজ ও শরীফুলকে হতাশ করে জয় ছিনিয়ে নেন। সেই সময় দুই পেসারকে মনে হচ্ছিল হারের ভারে ক্লান্ত তারা। সেই চাপেই খেই হারিয়ে ফেলেন। কেউ বলছেন জেতার সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ১২৭ রানের পুঁজি, এ যেন গোড়াতেই গলদ!