কোন বছরের কথা তা ঠিক মনে নেই। তবে তখন আমি বিলেতে আইনের ছাত্র। সমগ্র আফ্রিকায় চলছিল মহাদুর্ভিক্ষ, অনাহারে প্রাণ হারাচ্ছিল শত শত মানুষ। ঠিক একই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ চালকে প্লাস্টিক পণ্যে রূপান্তরিত করে মানবতা বিরোধিতার চরম উদাহরণ চালিয়ে যাচ্ছিল। জুড়িথ হার্ট নামের যুক্তরাজ্যের শ্রমিক দলের বিশ্বমানবতাবাদী নেত্রী ক্ষোভে ফেটে পড়ে তাঁর দলের সদস্যদের বলেছিলেন শিগগির ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে এ ধরনের নগ্ন অমানবিক কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য। চালকে যে প্লাস্টিকে রূপান্তর করা যায়, এ কথা তখনই প্রথম শুনেছিলাম। গত ২৫ সেপ্টেম্বর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সংস্থায় যে ভাষণ দিলেন, তা শুনে যুক্তরাজ্যের সেই শ্রমিকদলীয় নেত্রীর ভাষণের কথা মনে পড়ল, যার কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিল বিশ্বমানবতার কথা, বিশ্বের দরিদ্র জনসংখ্যার স্বার্থের কথা, দরিদ্র দেশগুলোর অধিকারের কথা এবং উন্নত দেশগুলোর অমানবিক আচরণের কথা। এ ভাষণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো প্রধানমন্ত্রী ঠিক তাঁর বিশ্ববন্ধু পিতার পদাঙ্কই অনুসরণ করছেন, একই আদর্শের ধারক। বঙ্গবন্ধু বলতেন, তাঁর প্রথম পরিচয় তিনি একজন মানুষ। মধ্য যুগের কবি চণ্ডীদাস সব মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ জাতীয় কবি নজরুলও লিখেছেন, ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’, লালন গেয়েছেন ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’।