গণমাধ্যমে, সে-ইলেকট্রনিকস কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ারই হোক, যখন মাদকের চোরাচালান হয়ে আসার খবর পড়ি, একজন অভিভাবক হিসেবে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আবার যখন দেখি অনেক গ্রামেই আজো কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়নি, তখনও আমার দম বন্ধ হবার জোগাড় হয়। শিশু-কিশোরদের অপরাধের খবর যখন পড়ি তখন রাগ জন্মে দেশের সীমান্তে যারা পাহারা দেন, তাদের ওপর। যারা দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত, তাদের ওপর গোস্যা জন্মে। আবার যখন মাদকের চোরাচালান তারাই ধরেন, তারাই মিডিয়ায় তা প্রচারের ব্যবস্থা করেন,তখন তাদের এবং সরকারের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টার জন্য ভালো বোধ করি, বাহবা দিই।
এই যে কথাগুলো বললাম, তা একজন অভিভাবকেরই শুধু নয়, আমি বিশ্বাস করি দেশের প্রতিটি পরিবারের, প্রতিটি অভিভাবকের। মা-বাবা সন্তানদের সুরক্ষায় সর্বদাই উদ্বিগ্ন থাকেন, সচেষ্ট হন। কিন্তু যে সব বাবা-মা সন্তান নিয়ে ভাবনার সময় পান না, নুন জোগাড় করতেই যাদের পান্তা শেষ হয়,তাদেরও সন্তানের কী অবস্থা? বিশেষ করে নগর-মহানগরের নিন্ম আয়ের দরিদ্র ও বস্তিতে বাস করা হাজার হাজার শিশুর মানবেতর জীবনের খোঁজ কি আমাদের শিক্ষিত ও ধনবান সমাজ রাখেন? এক কথায় রাখেন না। রাখলে আজকে বাংলাদেশের শিশু-কিশোর অপরাধের এমন রমরমা হতো না। চোরাই পথে যে মাদক আসে তার ব্যবহারকারীদের ৯০ শতাংশই আর্থিকভাবে হতদরিদ্র, নিরক্ষর ও অর্ধশিক্ষিত অবোঝ, ভবিষ্যৎ-চিন্তাহীন শিশু-কিশোর। এরাই কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে সব থেকে বেশি। কারণ এদও স্কুল নেই, লেখাপড়া নেই। তাদেও গাইড করার কেউ নেই যে সমাজে তারা নিরাপদে, বিনা বাধায় বড় হয়ে উঠবে। এরাই অপরাধী-গ্যাঙ গড়ে তোলে। এরাই অপরাধ করে গোটা সমাজকে কলুষিত করছে।